ভূমিকম্পে টলেনি গুজেলের পাখিপ্রেম
ইতিউতি পলেস্তারা খসে গেছে ঠিক। তবে ইস্পাতের গার্ডারের জোরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। তীব্র ভূমিকম্পেও অটল। এই ভবনের মতোই টলেনি মুরাত গুজেলের পাখিপ্রেম। তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের পর বরং যেন বেড়েছে।
ভবনটি দক্ষিণ তুরস্কের আন্তাকিয়ায়। শহরটির সিংহভাগ গুঁড়িয়ে গেছে। ভূমিকম্পের আগে এই ভবনের এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন মুরাত গুজেল। প্রতিটা দিন শেষে ছাদে গিয়ে ছড়িয়ে দিতেন পাখিখাদ্য।
গুজেলের ডাকে হোক আর খাবারের লোভেই হোক, একঝাঁক পাখি এসে ভিড় করত। বেশির ভাগই কবুতর, কিছু ঘুঘুশ্রেণির। গুজেল বলেন, ‘পাখিগুলোর দেখভাল এমনভাবে করতাম যেন আমাদেরই সন্তান। সে চেষ্টা জারি থাকবে।’
৬ ফেব্রুয়ারির ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ১১০টি পাখি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছেন তিনি। আর আন্তাকিয়ার ওই রেস্তোরাঁর ছাদে আছে ৪০টির মতো পাখি।
রেস্তোরাঁর একসময়কার ভাঁড়ারঘর এখন আবর্জনার স্তূপ। কাচের বয়াম ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে আছে জ্যাম। সে আবর্জনা মাড়িয়ে পাখিগুলোর কাছে যেতে হয় গুজেলকে। ছাদে সাদা আর বাদামি রঙের দুটি বড় পাখি নতুন বাসা বেঁধেছে। খাবারের আশায় আরও গোটা বিশেক তারের ওপর সার বেঁধে থাকে।
রেস্তোরাঁর নাম আন্তাকিয়া ব্রেকফাস্ট হাউস। ভূমিকম্পের আগে হেঁশেলের ভার ছিল গুজেলের কাঁধে। ৩০০ বছরের পুরোনো ভবনের উঠোনে বসে জলপাই আর পনিরের স্বাদ নিতেন খাদ্যরসিকরা।
ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে আন্তাকিয়া বেশ জনপ্রিয়। তুরস্কের তো বটেই, আন্তর্জাতিক পর্যটকে শহরটি বছরময় সরগরম থাকে।
গুজেলের বাড়িতে মোট পাঁচজনের বাস। তার তিন সন্তানের বয়স ৯, ১৫ ও ১৭ বছর। ছোটটির নাম এরেন। তার মধ্যেও বাবার পাখিপ্রেমের সঞ্চার হয়েছে। গুজেলের বাবাও পাখি পুষতেন। সে অবশ্য অনেক আগের কথা। গুজেলের জন্মের পর সে শখ তিনি ছেড়ে দেন।
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কবুতর পালন বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে কুর্দিদের মধ্যে। কবুতরের বিষ্ঠা তরমুজ চাষে ব্যবহার করে তারা।
ভূমিকম্পের পর থেকে গুজেলের ডেরার তিন কি চারটি নিয়মিত পাখি নিরুদ্দেশ হয়েছে। তবে জুটেছে আরও গোটা পঞ্চাশেক। নতুন এই পাখিগুলোর আগের মালিক ভূমিকম্পে মারা গেছেন বলে গুজেলের ধারণা।
গুজেলের বয়স এখন ৪০ বছর। দাড়িতে পাক ধরেছে। পাখির সান্নিধ্যে শান্তি পান তিনি, উদ্বেগ মিলিয়ে যায়। বিক্রি করা কিছু কবুতর এখনো মাঝেমধ্যে উড়ে আসে তার কাছে।
কাছাকাছি এক গ্রামে পরিবারসহ নিরাপদে আছেন গুজেল। কেবল পাখিগুলোর টানে প্রতিদিন জঞ্জাল মাড়িয়ে রেস্তোরাঁর ছাদে যান। চেনা পাখিগুলো তো বটেই, অতিথিগুলোকেও সমান কদর করেন। বলেছেন, ‘পাখিগুলো যতদিন আছে, ততদিন আমি এখানে আসতে থাকব।’