অ্যান্ড্রয়েড ভালো, নাকি আইফোন?
নতুন স্মার্টফোন কেনার সময়, সাধারণত পুরোনো অপারেটিং সিস্টেমেই থাকতে বলা হয়। অ্যান্ড্রয়েডে থাকলে অ্যান্ড্রয়েড, আইফোন হলে নতুন আরেকটি আইফোন।
এর একটি কারণ, নতুন স্মার্টফোনে চট করে সবকিছু নতুন মনে হবে না। দ্বিতীয়ত, কোনো অ্যাপ বা সেবা কেনা থাকলে তা হারানোর আশঙ্কা থাকে না। আবার পুরোনো স্মার্টফোনে সব ডেটা ঠিকমতো ব্যাকআপ করা থাকলে, নতুন ফোনে একই ই–মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে লগ-ইন করলে সব ডেটা নতুন ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়া যায়।
তাই বলে নদীর এ পাড়ে থেকে কেবল নিশ্বাস ছাড়িয়া যেতে হবে, ব্যাপারটা তো তা-ও না। মনস্থির যদি করেই ফেলেন যে অ্যান্ড্রয়েড থেকে আইফোনে যাবেন (কিংবা উল্টোটা), তবে আগে দেখে নিতে পারেন, কোন অপারেটিং সিস্টেমে কোন সুবিধা ভালো পাওয়া যায়, জেনে নিতে পারেন মূল পার্থক্য।
‘অ্যান্ড্রয়েড বনাম আইফোন’ বললে পুরোপুরি ঠিক বলা হয় না। আইফোন স্মার্টফোনের ব্র্যান্ড, আর অ্যান্ড্রয়েড হলো অপারেটিং সিস্টেম। আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম হলো আইওএস। সে হিসেবে ‘অ্যান্ড্রয়েড বনাম আইওএস’ বলা যুক্তিযুক্ত।
আইওএস যেখানে সেরা
আইফোন কেনার কারণ যতটা এর হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রাংশ, ততটাই সফটওয়্যার। কারণ উন্নত নিরাপত্তা থেকে শুরু করে আইওএসে নিয়মিত সফটওয়্যারের হালনাগাদ পাওয়া যায় বলে মানেন অনেকে।
সফটওয়্যার হালনাগাদ
আইফোন নির্বাচনের বড় কারণ হতে পারে নিয়মিত সফটওয়্যার হালনাগাদপ্রাপ্তি। নতুন আইফোন বা আইপ্যাড বাজারে আসার পর অন্তত পাঁচ থেকে ছয় বছর আইওএসের আপডেট পাওয়ার আশা করতে পারেন। তা-ও সব আইফোনে একই সঙ্গে।
অ্যান্ড্রয়েডের বেলায় কেবল গুগল পিক্সেল এবং অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান সিরিজের স্মার্টফোনগুলোয় নিয়মিত হালনাগাদ পেতে পারেন। তা-ও বড়জোর স্মার্টফোন প্রথম বাজারে ছাড়ার পরবর্তী দুই থেকে তিন বছরের বেশি নয়।
বিক্রির সময় ভালো দাম
আইফোনে নিয়মিত হালনাগাদ পাওয়ার একটা সুবিধা হলো দীর্ঘদিন সেটা ব্যবহারযোগ্য থাকে। অর্থাৎ দুই বছর ব্যবহারের পর ছোট ভাইকে পুত্রপৌত্রাদিক্রমে দান করতে পারেন, আবার বন্ধুর কাছে বিক্রিও করে দিতে পারেন। পুরোনো হলেও ছোট ভাই যেমন আইফোন পেয়ে খুশি হবে, বন্ধুর কাছ থেকেও তুলনামূলক দাম বেশি পাবেন (ক্ষেত্রবিশেষে দেব দেব করলেও, না-ও দিতে পারে)।
অ্যাপ ও গেমের প্রাপ্তি নিশ্চিত
আইফোনে অ্যাপ প্রাপ্তি অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় কিছুটা সহজ। তা ছাড়া বেশির ভাগ অ্যাপ বা গেম আইওএসের জন্য প্রথমে ছাড়া হয়, তারপর আসে অ্যান্ড্রয়েডে। কারণ, মূলত আইওএসের জন্য অ্যাপ তৈরি করলে নির্মাতারা তুলনামূলক বেশি টাকা পেয়ে থাকেন।
নিরাপত্তা এবং তথ্যের গোপনীয়তা
অ্যাপলের প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র নয়। তবে অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় ভালো বলে মানেন সবাই। যেকোনো সমস্যা, বিশেষ করে ম্যালওয়্যারের আক্রমণের বেলায় দ্রুত সমাধান পাওয়ার আশা করতে পারেন। তা ছাড়া, তথ্যের নিরাপত্তায় অ্যাপলের প্রয়াসও অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় বেশি। আবার অ্যান্ড্রয়েড মুক্ত সোর্স-কোডভিত্তিক সফটওয়্যার, আইওএস তা নয়।
অ্যাপলের আইমেসেজ, ফেসটাইম এবং আইক্লাউডে তথ্যের আদান-প্রদানও তুলনামূলক নিরাপদ।
অ্যান্ড্রয়েডের মতো অ্যাপলও ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। তবে অ্যাপলের সংগৃহীত তথ্যে কোনো ব্যবহারকারীকে সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকে না।
অ্যান্ড্রয়েড যেখানে সেরা
আইওএস ভালো হলেও সবার জন্য সেটি সেরা অপশন না-ও হতে পারে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে স্মার্টফোনের সংখ্যা অনেক। ফলে পছন্দের নকশা পাওয়া সহজ। তা ছাড়া কম দামে অনেক অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন পাওয়া যায়। এটা ঠিক যে নিয়মিত সফটওয়্যার হালনাগাদ পাওয়া যায় না, তবে স্মার্টফোন কেনায় সেটা খুব বেশি প্রভাবও ফেলে না।
অনেক স্মার্টফোন থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ
অ্যান্ড্রয়েডের সবচেয়ে বড় সুবিধা বোধ হয় সফটওয়্যারের চেয়ে হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রাংশেই বেশি। অর্থাৎ অনেক মডেল থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। চাইলে ভালো ক্যামেরার স্মার্টফোন কিনতে পারেন, আবার গুরুত্ব দিতে পারেন দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারিতে, পর্দার আকারেও বৈচিত্র্য বেশি। অর্থাৎ যেমন চান, তেমন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন আপনি পাবেন বাজারে।
যেমন বাজেট, তেমন ফোন
নতুন আইফোনের দাম কমপক্ষে এক হাজার ডলার। তুলনামূলক কম দামের ‘আইফোন এসই’র দামও ৪০০ ডলারের কম নয়। আমাদের দেশে এলে দাম আরও বেড়ে যায়। গুগল, হুয়াওয়ে বা স্যামসাংয়ের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের দাম হয়তো নতুন আইফোনের মতোই। তবে আপনার বাজেট যেমনই হোক, সে দামেই বাজারে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন পাবেন।
সবকিছুই পরিবর্তনযোগ্য
এখন আইফোনে সবকিছুই বদলানো যায়। আপনি লেখার আকার বদলাতে পারবেন, হোম স্ক্রিনে আইকনের বিন্যাসে পরিবর্তন আনতে পারবেন, থার্ড পার্টি কি-বোর্ড ইনস্টল করার সুযোগও আছে। তবু একটু লক্ষ করলে দেখবেন, সব আইফোন দেখতে কমবেশি একই রকম। অর্থাৎ খুব বেশি কাস্টমাইজেশন বা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়েডে মোটামুটি সবকিছুই বদলানো যায়।
বাড়তি মেমোরি
আইফোনে আলাদা মেমোরি কার্ড যোগ করার সুযোগ নেই। আপনি যে পরিমাণ ইন্টারনাল স্টোরেজের আইফোন কিনবেন, ওটুকুই। স্টোরেজ বাড়াতে পারবেন না। অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আলাদা মেমোরি কার্ড যোগ করা যায়।
এবার ভেবে দেখুন আপনি কী চান!