আমি হিউম্যান না রোবট, তা জেনে গুগলের কাজ কী

 আমি হিউম্যান না রোবট, তা জেনে গুগলের কাজ কী

গুগলে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি এমন ব্যবহারকারী পাওয়া কঠিন

গুগল মাঝেমধ্যে প্রেমিকার মতো আচরণ করে। এই গলায় গলায় ভাব তো এই আবার ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, তুমি আমার কে!

তখন আমি কে, তা নানাভাবে বোঝাতে হয়। ছবিতে ট্র্যাফিক লাইটগুলো বেছে দিতে হয়। কোন ছবিতে বাইসাইকেল আছে, তা দেখিয়ে দিতে হয়। আবার ছবিতে দেখানো অক্ষরগুলো টাইপ করতে হয়।

সবচেয়ে দুঃখ লাগে, যখন দেখি দুনিয়ায় ৮৭ লাখ প্রজাতির জীব থাকতে গুগল আমাকে কিনা রোবট সাব্যস্ত করে। তখন ক্যাপচা কপচে নিজেকে মানুষ বলে প্রমাণ করতে হয়।

গুগল ব্যবহার করতে গিয়ে ক্যাপচার ফেরে পড়েননি, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। মনে করুন, আপনি নির্ভাবনায় নির্বিঘ্নে গুগল ব্রাউজ করছেন। এমন সময় হুট করে আপনাকে অগ্নিপরীক্ষায় ফেলে দেবে। আপনি যে রোবট নন, তা প্রমাণ করতে বলবে। আর ওই যে বললাম, পরীক্ষায় উতরে যেতে চাইলে প্রশ্নপত্রের ঠিকঠাক উত্তর না দিলেই নয়।

উত্তর সঠিক হলে আপনি আবার আগের মতো গুগলে তথ্যের খোঁজ করতে পারবেন। ভুল হলে আবার অক্ষর টাইপ করতে হবে কিংবা নতুন এক সেট ছবি থেকে নির্দিষ্ট ছবিগুলো নির্বাচন করে দিতে হবে।

ক্যাপচার কচকচানি

গুগল আপনাকে যে অক্ষর কিংবা ছবি মেলাতে বলে, তার নাম ক্যাপচা। ইংরেজিতে খটমট একগুচ্ছ শব্দের আদ্যক্ষর নিয়ে ক্যাপচা শব্দটি গড়া হয়েছে। যিনি গুগল ব্রাউজ করছেন, তিনি যে রক্তমাংসের গড়া মানুষ এবং স্বয়ংক্রিয় কোনো প্রোগ্রাম নয়, তা প্রমাণ করার জন্য গুগলের এই ব্যবস্থা।

গুগল জানিয়েছে, স্প্যাম বট, ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত কম্পিউটার, পুরোনো ডিএসএল রাউটার কিংবা এসইও র্যা ঙ্কিং টুলের কারণে ক্যাপচা দেখায়। এখন প্রশ্ন হলো, ক্ষতিকর স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার ঠেকানোর জন্য ক্যাপচা তৈরি হলে আপনাকে কেন দেখায়?

এ প্রশ্নের সরল উত্তর হলো, গুগল আপনাকে স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রাম বা বট ভেবে ভুল করে থাকতে পারে। তখন আপনাকে ক্যাপচার উত্তর হিসেবে ছবির অক্ষরগুলো লেখা কিংবা নির্দিষ্ট ছবিতে ক্লিক করতে হতে পারে। তবে বারবার ক্যাপচা দেখালে কম্পিউটার ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত কি না, তা জানতে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে স্ক্যান করে দেখতে পারেন। এবার দ্বিতীয় প্রশ্নে যাওয়া যাক, স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার কেন ঠেকাতে চায় গুগল?

গুগল কিন্তু এই রোবটের কথা বলেনি। বরং স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রাম বুঝিয়েছে। ছবি: পেক্সেলস
গুগল কিন্তু এই রোবটের কথা বলেনি। বরং স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রাম বুঝিয়েছে। ছবি: পেক্সেলস

রোবটে গুগলের এত আপত্তি কেন

গুগলে তথ্য খোঁজার সেবা বিনা মূল্যে দিলেও এর পেছনে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় বিশাল। সার্ভার খরচ আছে, ব্যান্ডউইডথের ব্যয় আছে, কর্মীদের বেতন আছে। খরচের এমন ১০০টি খাত দেখানো যাবে।

বিজ্ঞাপন দেখানোর বিনিময়ে আপনাকে বিনা মূল্যে সেবা দেয় গুগল। সে সঙ্গে বিপুল আয়ও করে। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় টুল বা রোবটকে সেবা ব্যবহার করতে দিয়ে গুগলের লাভ কী? রোবটকে তো আর বিজ্ঞাপন দেখিয়ে লাভ নেই। রোবট নিশ্চয় চানাচুরের বিজ্ঞাপন দেখে দোকানে চানাচুর কিনতে যাবে না।

আরেকটি কারণ হলো, অনেক সময় এসইও র্যা্ঙ্কিং টুলের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু কি-ওয়ার্ড লিখে গুগলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বারবার খোঁজা হয়। মূলত কোনো ওয়েবসাইটকে গুগলে র্যা ঙ্ক বা ওই কি-ওয়ার্ডগুলো লিখে খুঁজলে যেন ফলাফলের শুরুর দিকে দেখায়, তা নিশ্চিত করতে কাজটি করে থাকেন অনেকে। তবে সেটা তো অনৈতিক। আর সে কারণেই গুগল এই স্বয়ংক্রিয় টুলের ব্যবহার বন্ধ করতে ক্যাপচা ব্যবহার করে।

নাকি আরও বড় উদ্দেশ্য আছে?

তবে ক্যাপচা দেখানোর পেছনে আরও বড় উদ্দেশ্য থাকতে পারে গুগলের। যেমন তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যারকে প্রশিক্ষিত করার কাজে লাগতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রামে যত বেশি ডেটা ইনপুট দেওয়া হয়, সেটি তত বেশি শিখতে পারে। তবে বিপুল পরিমাণ তথ্যের জোগান দেওয়া সহজ কাজ নয়। প্রক্রিয়াটি সহজ করার জন্য গুগল আপনার-আমার মতো ব্যবহারকারীর সাহায্য নিয়ে থাকে।

আগে যেমন ক্যাপচা হিসেবে ছবিতে দেখানো এলোমেলো বা ঘোলাটে অক্ষর কিংবা সংখ্যা ইনপুট দিতে বলত গুগল। সেটি স্ক্যান করা বইয়ের পাতায় লেখা বুঝতে সাহায্য করেছে গুগলের সফটওয়্যারকে। কিংবা গুগলকে ছবিতে দেখানো বস্তু শনাক্তে সাহায্য করেছে।

আবার মনে করুন, ক্যাপচায় আপনাকে ট্র্যাফিক বাতি শনাক্ত করতে বলা হলো। আপনি অনেকগুলো ছবির মধ্যে তা শনাক্ত করে দেখালেন। সে ডেটা অতি সামান্য হলেও চালকবিহীন গাড়ি প্রযুক্তি উন্নয়নে গুগলকে সাহায্য করবে। হয়তো আজ না হলেও ভবিষ্যতে কোনো একদিন। আপনার ইনপুট দেওয়া সে তথ্যের মতো হাজার–কোটি তথ্য এক করে চালকবিহীন গাড়ি হয়তো রাস্তায় ট্র্যাফিক বাতি দেখামাত্র চিনতে শিখবে।

একদিক থেকে ভাবলে আপনি বিনা পারিশ্রমিকে গুগলের হয়ে কাজ করে দিলেন। অন্যদিকে ছোট্ট পদক্ষেপে হলেও একটি চমৎকার প্রযুক্তিকে এক ধাপ এগিয়ে নিলেন।

সে যাহোক, ক্যাপচা সামনে এলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ তো নেই। জীবন থেকে মহামূল্যবান দুটি সেকেন্ড ব্যয় করে না হয় দিলেন গুগলের প্রশ্নের উত্তর। আর চমৎকার কোনো প্রযুক্তির উন্নয়নে নিজের ছোট্ট অবদানের কথা ভেবে মনে মনে খানিকটা গর্বিতও হতে পারেন।

এক সহকর্মীর প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এই লেখা। গুগল তাঁকে রোবট মনে করায় গাল ফুলিয়ে বসে ছিলেন তিনি। পাঠক, চাইলে কমেন্টে আপনিও প্রযুক্তিবিষয়ক কোনো প্রশ্ন করতে পারেন। নিজে জানলে তো ভালোই। না জানলে গুগল তো আছেই!

    আরও পড়ুন

    মন্তব্য করুন

    Your email address will not be published.