কীভাবে কফি পান সবচেয়ে উপকারী? দিনে কয় কাপ কফি নিরাপদ?

 কীভাবে কফি পান সবচেয়ে উপকারী? দিনে কয় কাপ কফি নিরাপদ?

কফি শরীরে কী পরিবর্তন আনছে? কীভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে কর্মশক্তি? কীভাবে রাখছে সজাগ? নাকি এসব কেবলই ভ্রান্ত ধারণা? ছবি: পেক্সেলস

কফি। কারও কাছে সঞ্জীবনী রস। কেউ বলেন তরল সোনা। কফি পানের প্রথম নজির মেলে আরবদেশে। পান করতেন সুফি সাধকেরা। এতে ধর্মানুষ্ঠানে মনোযোগী হতে সুবিধা হতো। সে অবশ্য বহুকাল আগের কথা। এখন সর্বাধিক পান করা পানীয়গুলোর একটি। প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি কাপ কফি পান করে বিশ্বের মানুষ।

কফি নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। গবেষণা হয়েছে ঢের। বেশ গুরুত্ব দেয় সবাই। এমনকি কফি তৈরির প্রক্রিয়া দেখতেও প্রতি বছর হাজারো মানুষ ভিড় করে। ‘ব্ল্যাক আইভরি’ ব্লেন্ডের কথা এখানে বলা যেতে পারে। এ ধরণের কফির উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয় হাতিকে অ্যারাবিকা বেরি খাইয়ে। খুচরা বিক্রির দর কেজিপ্রতি ২ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ডের বেশি। বাংলাদেশি টাকায় আড়াই লাখের বেশি।

সে না হয় হলো। তবে কফি আসলে শরীরে করেটা কী? কী এমন পরিবর্তন আনে? ক্যাফেইন ঘুম তাড়ায় বলে ভাসাভাসা একটা ধারণা হয়তো আছে। কাজে গতি আনে বলে মনে করেন অনেকে। তবে কতটুকু কফি পান শরীরের জন্য নিরাপদ?

এক কাপ আমেরিকানোতে ক্যাফেইন ছাড়াও ১০০টির বেশি জৈব সক্রিয় উপাদান থাকে। সেদিক থেকে কফিকে কি ওষুধের পর্যায়ে ফেলা যায়? যদি তা-ই হয় তবে দিনে দুই কি তিনবার যে ওষুধ নিচ্ছেন, তা শরীরে কী পরিবর্তন আনছে? কীভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে কর্মশক্তি? কীভাবে রাখছে সজাগ? নাকি এসব কেবলই ভ্রান্ত ধারণা? চলুন জানার চেষ্টা করি।

কফি কত দ্রুত কাজ শুরু করে?

কাপে চুমুক দেওয়ার আগেই হয়তো কফির কাজ শুরু হয়। যেমন কেবল কফির ঘ্রাণ পেলেই স্মৃতিশক্তি উন্নত হতে পারে, কর্মশক্তি বাড়তে পারে। এ কথা কেবল ধারণালব্ধ নয়। ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী ৮০ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে ২০১৯ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

কফি কীভাবে ঘুম তাড়ায়? কীভাবে কফি পান করা ভালো? দিনে কয় কাপ কফি নিরাপদ?
কেবল কফির ঘ্রাণ পেলেই স্মৃতিশক্তি উন্নত হতে পারে, কর্মশক্তি বাড়তে পারে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ছবি: পেক্সেলস

২০১৮ সালের আরেক গবেষণায় দেখা যায়, ভালো কফির ঘ্রাণ নেওয়ার খানিক বাদেই বিশ্লেষণধর্মী কাজে ভালো করতে শুরু করে মানুষ। প্লাসিবো ইফেক্টের কারণে এমনটা হয় বলে মনে করা হয়।

প্লাসিবোর বাংলা ছলৌষধ বা ছল-চিকিৎসা। এর শারীরিক প্রভাব থাকে না তবে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করে। রোগী ভাবতে শুরু করেন নিশ্চয় কার্যকরী কোনো ওষুধ সেবন করছেন তিনি যার প্রভাবে রোগ সেরে যাবে। আর এই ক্ষেত্রে কফি পানে কর্মশক্তি বাড়বে ভেবেই তা বেড়ে যেতে পারে। এসব অবশ্য কেবলই তত্ত্বকথা।

ঘ্রাণে অর্ধভোজন না হয় হলো, যখন সত্যিই কাপে চুমুক দেবেন? প্লাসিবো ইফেক্ট আর ক্যাফেইনের প্রভাব মিলিয়ে কফিতে চুমুক দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এর কার্যকারিতা শুরু হতে পারে। সেটা ১০ মিনিটের মধ্যেই। আর রক্তে ক্যাফেইনের প্রভাব বেশি থাকে ৪৫ মিনিটের মাথায়। এটাও গবেষণালব্ধ তথ্য, ২০০৮ সালের।

কফি আপনাকে সজাগ রাখে কীভাবে?

শরীরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে ক্যাফেইন। এতে পানকারী সক্রিয় ও মনোযোগী হয়ে ওঠেন। ক্ষেত্রবিশেষে খিটখিটে কিংবা উদ্বিগ্নও করতে পারে।

ক্যাফেইনের কার্যকারিতার পুরোটা নির্ভর করে শরীরের অ্যাডেনোসিন রিসেপ্টরের ওপর। শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয় জৈব যৌগ অ্যাডেনোসিন। আর রিসেপ্টরের কাজ হলো হৃৎস্পন্দন, রক্তপ্রবাহ এবং ঘুম-জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণ করা।

রিসেপ্টরগুলোর সঙ্গে কাজ করার সময় অ্যাডেনোসিন এক ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে যার ফলে কোষের কাজ কমে যায়। এতে প্রায় ক্ষেত্রে ঝিমুনি আসে, ঘুম পায়।

ক্যাফেইন আপনার স্নায়ুকোষকে বোকা বানাতে পারে। তখন রিসেপ্টরের বদলে ক্যাফেইনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করে স্নায়ুকোষ। এতে অ্যাডেনোসিনের কাজ বাধা পায়। ফলে ঝিমুনির বদলে সজাগ হয়ে ওঠে মানুষ, বাড়ে কর্মশক্তি।

কফি কীভাবে ঘুম তাড়ায়? কীভাবে কফি পান করা ভালো? দিনে কয় কাপ কফি নিরাপদ?
কফি বিন ভেজে চূর্ণ করে তা থেকে পানীয় কফি তৈরি করা হয়। ছবি: পিক্সাবে

পাশাপাশি ডোপামিনের মতো মস্তিষ্কের উদ্দীপক নিউরোট্রান্সমিটারগুলোকে উন্মত্ত হয়ে উঠতে দেয়। এ কারণেই কফি পানে অনেকের মন চাঙা হয়। তবে অতিরিক্ত পানে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে।

কফি পানের খানিক পর ক্যাফেইনের প্রভাবে শরীর অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা ভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

কফি কি অ্যাথলেটিক পারফরমেন্স বাড়াতে পারে?

তা তো পারেই। শখের সাইক্লিস্টদের ওপর এক জরিপ চালানো হয় ২০২০ সালে। এতে বলা হয়, কফি গড়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে পারফরমেন্স উন্নত করে। শুনতে কম মনে হলেও প্রতিযোগিতামূলক খেলায় এটা অনেক কিছু। আবার পুরোনো এক ব্রিটিশ গবেষণায় কফি পানকারীদের মধ্যে রিঅ্যাকশন টাইম, স্মৃতি এবং ভিজুয়াল-স্পেশল রিজনিং উন্নত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

কতটুকু ক্যাফেইন শরীরের জন্য নিরাপদ?

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফেইন গ্রহণের পরামর্শ দেয়।

কফি পানে পারফরমেন্স বৃদ্ধির মূলে মূলত ক্যাফেইন। তবে অ্যাথলেটদের ক্যাফেইন দরকার, সেটা কফি থেকেই পেতে হবে এমন না। তা ছাড়া, অ্যাথলেটদের জন্য কফি কেন সেরা অপশন না, তার কারণ পাওয়া যায় ভোক্তা স্বার্থরক্ষা সংগঠন ‘হুইচ?’-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। তারা দেখলেন কফি চেইনশপ ‘কস্টা’র মাঝারি এক কাপ কাপুচিনোতে ৩২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে, স্টারবাকসের একই কফিতে থাকে ৬৬ মিলিগ্রাম। ২০০৩ সালের এক জরিপে পরপর ছয়দিন একই দোকানের একই পানীয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে ক্যাফেইন (২৫৯ থেকে ৫৬৪ মিলিগ্রাম) পাওয়া গেছে।

অন্তঃসত্ত্বা হলে ভিন্ন কথা, অন্যথায় ক্যাফেইন গ্রহণের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারিত করা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের পরামর্শ হলো, দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন গ্রহণ করা যেতে পারে।

গবেষক ও কর্মক্ষমতা বিশেষজ্ঞ ড. মাইক টি নেলসন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘পার্থক্যের কারণ হতে পারে কফি বিন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অ্যারাবিকার চেয়ে রোবাস্টা বিনে ক্যাফেইন বেশি থাকে। এখানে আরও ব্যাপার আছে। কফি বিন রোস্ট বা ভাজার সময় ক্যাফেইন কমতে পারে। সাধারণত বেশি রোস্ট করা কফিতে ক্যাফেইন কম থাকে। তবে দোকানগুলো নিজেদের মতো মান নির্ধারণের চেষ্টার পরও এক কাপ থেকে আরেক কাপে ক্যাফেইনের হারে তারতম্য অনেক।’

কফি কীভাবে ঘুম তাড়ায়? কীভাবে কফি পান করা ভালো? দিনে কয় কাপ কফি নিরাপদ?
ক্যাফেইনের উৎস হিসেবে অ্যাথলেটদের কাছে কফি সেরা অপশন নয়। ছবি: পেক্সেলস

নেলসন আরও বলেন, ‘সে কারণেই অ্যাথলেট হিসেবে আপনি যদি কেবল পারফরমেন্স উন্নত করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণ করতে চান, তবে আমার পরামর্শ হবে পিল আকারে ক্যাফেইন নিন। তাতে গ্রহণের হার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন সহজে।’

কিছু এনড্যুরেন্স অ্যাথলেটের সঙ্গে কাজ করেছেন নেলসন যারা নিয়ম না মেনে প্রতিযোগিতার আগে যেকোনো দোকান থেকে সাধারণ কফি কিনে পান করতেন। অনেকবার তাদের পারফরমেন্সে কিছুটা তারতম্য পাওয়া যায়। নেলসনের ধারণা, হতে পারে ক্যাফেইন গ্রহণের হার ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ না করায় তেমনটা হয়েছিল।

কফি পান কখন কমিয়ে দিতে হবে?

এ প্রশ্নে অনেক বিতর্ক আছে। ক্যাফেইনের ‘হাফ-লাইফ’ প্রায় ছয় ঘণ্টার। অর্থাৎ দিনের শেষ কফিটা বিকেল চারটায় পান করলে রাত ১০টায় গিয়েও তার আধা প্রভাব শরীরে থেকে যাবে। অথচ তখন আপনার ঘুমানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। সে সমস্যা এড়াতে অনেকে দুপুরের পর আর কফি পান করেন না। তবে সে ক্ষেত্রেও সকালে যথেচ্ছ পান করলে চলবে না।

স্লিপ কোচ হিসেবে কাজ করেন নিক লিটলহেলস। ছিলেন অনেক স্বনামধন্য ফুটবল দলের সঙ্গে। দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেছেন, ‘ভারসাম্য থাকা উচিত। অনেককে দেখেছি সকালে পরপর কমবেশি তিন কাপ কফি পান করেন। মধ্যাহ্নভোজের আগে হাজার-দেড় হাজার মিলিগ্রাম ক্যাফেইন শরীরে ঢুকে যায়, এরপর তারা কফি পান বন্ধ করে দেন। এটা বিচক্ষণের মতো কাজ না। বরং পরিমিত পরিমাণ বজায় রাখতে হবে, হঠাৎ বেশি হঠাৎ কম যেন না হয়। খেয়াল রাখুন দিনের কখন আপনার মধ্যে ঝিমুনি ভাব আসছে, সে অনুযায়ী ক্যাফেইন গ্রহণের কৌশল নির্ধারণ করুন।’

দিনে কয় কাপ কফি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

বিষয়টি এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার করতে পারেনি বিজ্ঞান। অতিরিক্ত কফি পানের সঙ্গে ক্যানসারের ঝুঁকি কিংবা হৃদরোগের সম্পর্কের কথা বলেন কেউ কেউ। আবার কেউ বলেন, দিনে কয়েক কাপ কফি তো ভালোই। এ ক্ষেত্রে আমরা গবেষণা-বিশ্লেষণে চোখ বোলাতে পারি। ২০০-এর বেশি গবেষণার সারতথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয় ২০১৭ সালে। তাতে বলা হয়, পরিমিত পরিমাণে কফি পান সাধারণত নিরাপদ। স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রসঙ্গে বেশিরভাগ গবেষণায় দিনে তিন-চার কাপ কফির কথা বলা হয়েছে, এতে ক্ষতির চেয়ে বরং উপকারের সম্ভাবনাই বেশি।

কফি কীভাবে ঘুম তাড়ায়? কীভাবে কফি পান করা ভালো? দিনে কয় কাপ কফি নিরাপদ?
কাঁচা-পাকা কফি ফল। ছবি: পেক্সেলস

একই বছরের আরেক গবেষণা পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, কফি হয়তো কয়েক ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। পাশাপাশি হৃদরোগ, পারকিনসনস ডিজিজ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসেও উপকার মিলতে পারে। আবার কফির মন চাঙা করার উপাদান দীর্ঘমেয়াদে উপকারী—এমন কিছু তথ্যও মেলে।

২০১৬ সালের এক মেটা-অ্যানালিসিসে বলা হয়, ক্যাফেইন গ্রহণ বিষণ্ণতার ঝুঁকি কমায়। ২০১০ সালে ফিনল্যান্ডের এক গবেষণাতেও কাছাকাছি উপসংহার টানা হয়। ফিনিশ গবেষণায় আরও বলা হয়, ক্যাফেইনযুক্ত অন্যান্য পানীয় পানের সঙ্গে বিষণ্ণতা কমানোর সম্পর্ক তুলনামূলক কম। এতে ধারণা করা হয়, কফিতে বিশেষ কিছু আছে যা মন চাঙা করে। সেই বিশেষ কিছু কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলে একটা মত আছে, যা সার্বিকভাবে চাপ কমানোর সঙ্গে সম্পর্কিত।

কফি মেদ ঝরাতেও পারে। তবে সেটা শরীরচর্চার সঙ্গে হলে বেশি কার্যকরী। নেলসন বলেন, ‘মেদ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সেটা কোষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তারপর গলাতে হবে। ক্যাফেইন এই বিচ্ছিন্ন করার কাজ বা লিপোলাইসিস প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।’

সেদিক থেকে বলা যায়, সকালে শরীরচর্চার আগে এক কাপ কফি পান করলে তা কেবল শরীর চাঙার চেয়ে বেশিই কাজ করবে।

কীভাবে কফি পান করা উচিত?

কফি পান করার ধরন কি গুরুত্বপূর্ণ? সংক্ষিপ্ত উত্তর—হ্যাঁ। কফি বিন রোস্ট বা ভাজার সময় ও ধরনের ওপর নির্ভর করে নানা ভাবে শ্রেণিভুক্ত করা যায়। সবচেয়ে প্রচলিত হলো লাইট, মিডিয়াম ও ডার্ক। ডার্ক রোস্টে যেমন ক্যাফেইন কম থাকে, আবার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের পরিমাণও কম। প্রদাহ ও কোষের ক্ষতি থেকে শরীর রক্ষা করে এই অ্যাসিড।

কফি পানের উপযোগী করতে রোস্টের পর চূর্ণ করা হয়, যার বহুল প্রচলিত শব্দটি হলো গ্রাইন্ড। কফি বিন কতটা গ্রাইন্ড করা হবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। ভালমতো গ্রাইন্ড করা হলে পলিফেনল ছড়ায় বেশি, এতে কফির উপকারিতা কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।

আবার কফি তৈরিতে কাগজের ফিল্টার ব্যবহার করলে সেটা ধাতব ফিল্টার বা ফিল্টার ছাড়া তৈরি কফির চেয়ে কিছুটা স্বাস্থ্যকর হতে পারে। ২০২০ সালে এ নিয়ে একটি গবেষণা হয়। প্রায় দুই দশক ধরে কফি পান করছেন এমন পাঁচ লাখের বেশি স্বাস্থ্যবান মানুষের ওপর জরিপ চালানো হয়। ফলাফল বলছে, যারা ফিল্টার ব্যবহার করে তৈরি কফি পান করেছেন তাদের মধ্যে ধমনী-সংক্রান্ত রোগ এবং রোগে মৃত্যুহার কম। গবেষকদল উপসংহারে বলেছেন, কফির যে বস্তু ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে, ফিল্টারের মাধ্যমে তা ছেঁকে বাদ দেওয়া সম্ভব। তারা বলেছেন, ফিল্টার ব্যবহার না করে তৈরি এক কাপ কফিতে ৩০ গুণ বেশি লিপিড-বর্ধক উপাদান থাকে।

কফি কীভাবে ঘুম তাড়ায়? কীভাবে কফি পান করা ভালো? দিনে কয় কাপ কফি নিরাপদ?
গবেষণা বলছে, ফিল্টার বা ছাঁকনি ব্যবহারে তৈরি কফি কিছুটা হলেও বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। ছবি: পেক্সেলস

ব্রিউড কফি তৈরি হয় চূর্ণ কফি বিনে গরম পানি ঢেলে। এই পদ্ধতিতে সচরাচর ফিল্টারের ওপর কফি বিন রাখা হয়, গরম পানি দেওয়ার খানিক পর ফিল্টারের নিচে ফোঁটায় ফোঁটায় কফি জমা হতে থাকে। অনেকে কফি ব্রিউয়ের তাপমাত্রা নিয়ে খুব সচেতন থাকেন। তবে গুণাগুণে এই তাপমাত্রা বিশেষ ভূমিকা রাখে না।

কফি যেমন নানাভাবে তৈরি হয়, কফিশপগুলোতে দেখবেন তেমনই নানা অপশন দেওয়া থাকে। সবচেয়ে সাধারণ হলো দুধ কিংবা চিনি। তবে দুধ-চিনি বা এমন কোনো কিছু মেশালে ক্যাফেইনের কার্যকারিতায় পরিবর্তন আসে কি না, তা নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি। নেলসন বলছেন, ‘আমার ধারণা কিছুটা দুধ মেশালে ক্যাফেইনের প্রভাব কিছুটা ধীরে শুরু হবে, সঙ্গে খাবার খেলেও তেমনটা হয়।’

২০০১ সালে ক্যাফেইন আর কার্বোহাইড্রেট একসঙ্গে গ্রহণের প্রভাব বোঝার চেষ্টা করেন একদল গবেষক। তারা দেখলেন দুটি একসঙ্গে নিলে কর্মক্ষমতা বাড়ানোর মতো আলাদা কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না।

তবে কফিতে কিছুটা দুধ আর চিনি মিশিয়ে পান করলে তাতে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ তো বাড়বেই। সেটা কমানোর একটা উপায় কিন্তু আছে। আর তা হলো, একচিমটি দারুচিনির গুঁড়া। নেলসন বলেছেন, ‘এটা মেদ কমানোয় বড় প্রভাব হয়তো ফেলবে না। তবে কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে এতে গ্লুকোজ বিপাকে সাহায্য করতে পারে। সুতরাং আপনি যদি গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণের কথা ভেবে থাকেন তবে এটা কাজে দিতে পারে। সামান্য একটি ছিটিয়ে দিলে কিছু হবে না।’

পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘বুলেটপ্রুফ’ কফির চল দেখা যাচ্ছে। কফির সঙ্গে মাখন ও নারকেল তেল মিশিয়ে বলা হচ্ছে এটা অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। তবে সে দাবির সত্যতা মেলা ভার। আপাতত বিপণনের কৌশল বলেই মনে হচ্ছে। এটা খিদে কমিয়ে দিতে পারে, যেহেতু ক্যালরির কমতি নেই এতে। তবে এই কফি খেয়ে সকালের নাশতা এড়িয়ে গেলে বরং সকাল-সকাল পুষ্টিগুণ হারাবেন।

সারাংশে আসা যাক

এবার একনজরে আমাদের আলোচনায় চোখ বোলান যাক। দিনে তিন কাপ পর্যন্ত কফি হয়তো ভালো। সম্ভব হলে ফিল্টার ব্যবহার করে তৈরি করুন। ক্যাফেইন কমাতে চাইলে ডার্ক রোস্ট ভালো অপশন, অন্যান্য উপাদান পেতে চাইলে লাইট রোস্ট ভালো। কফি সকালের দিকে পান করলেই ভালো। এক কাপের সঙ্গে আরেক কাপ গ্রহণে সময়ের কিছুটা ফারাক থাকা জরুরি। আর শেষ কফিটা ঘুমাতে যাওয়ার অনেক আগে পান করাই ভালো।

    আরও পড়ুন

    মন্তব্য করুন

    Your email address will not be published.