মহাকাশে মৃত্যু হলে মরদেহের কী হবে

 মহাকাশে মৃত্যু হলে মরদেহের কী হবে

মহাকাশে মৃত্যু হলে মরদেহে কি পচন ধরবে? ছবি: নাসা/আনস্প্ল্যাশ

ঠিক ‘ঈদের ছুটিতে মহাকাশ থেকে ঘুরে আসি’ পর্যায়ে না গেলেও আনন্দভ্রমণের জন্য মহাকাশে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। কে জানে একপর্যায়ে হয়তো এক দিনের ছুটিতে চাঁদ আর ছুটি বেশি হলে একসঙ্গে তিনটি গ্রহ থেকে ঘুরে আসার ভ্রমণ প্যাকেজ চালু হবে।

জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন এরই মধ্যে টিকিট কেটে সাব-অরবিটাল বা উপকক্ষীয় মহাকাশ ভ্রমণের ব্যবস্থা চালু করেছেন। আর ইলন মাস্ক তো তাঁর প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহে বসতি গড়ার পরিকল্পনা করছেন।

মহাকাশে বাস করার অভিজ্ঞতা কেমন হবে, তা নিয়ে ভাবার সময় বোধ হয় হয়ে গেছে। একই সঙ্গে কেউ সেখানে মারা গেলে কী হবে, সেটাও। পৃথিবীতে মৃত্যুর পর মরদেহে কয়েক ধাপে পচন হয়।

শুরুতেই রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে এক জায়গায় জমা হতে শুরু করবে। এই প্রক্রিয়া লিভর মরটিস হিসেবে পরিচিত। এরপর দেহ শীতল হয়ে অ্যালগর মরটিস পর্যায়ে পৌঁছাবে এবং পেশিতন্তুতে ক্যালসিয়ামের অনিয়ন্ত্রিত গঠনের জন্য মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাবে। এই ধাপের নাম রিগর মরটিস। এরপর কোষপ্রাচীর ভেঙে ভেতরের উপাদান বেরিয়ে আসে।

কৌতূহল যাদের বেশি, তাদের জন্য অহেতুক সব প্রশ্নের উত্তর আছে এখানে

একই সঙ্গে অন্ত্র থেকে ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সেগুলো শরীরের নরম টিস্যু গ্রাস করে এবং যে গ্যাস নির্গত করে, তাতে শরীর ফুলে যায়। রিগর মরটিস পর্যায়ে শক্ত হওয়া মাংসপেশি এ পর্যায়ে এসে নরম হয়ে যায়, কড়া গন্ধ বেরোতে শুরু করে এবং নরম টিস্যুগুলো ভেঙে যায়।

এই হলো পচনের সহজাত প্রক্রিয়া। তবে আরও অনেক প্রভাবক আছে, যা পচনের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে, যেমন তাপমাত্রা, পোকামাকড়, কবর, মরদেহ মুড়িয়ে রাখা এবং পানি বা আগুনের উপস্থিতি। আবার শুষ্ক পরিবেশে মমিকরণ হতে পারে, সেটা শীতল হোক কিংবা উষ্ণ।

অক্সিজেনহীন স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে পানি হাইড্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় শরীরের চর্বি ভেঙে মোমের মতো উপাদানে পরিণত করতে পারে। এই মোমের মতো উপাদান চামড়ার ওপর প্রলেপ হিসেবে কাজ করে দেহ সংরক্ষণ করে।

তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নরম কোষ শেষমেশ নিঃশেষ হয়ে কঙ্কাল বেরিয়ে আসবে। অবশ্য কঙ্কাল বেশ নাছোড়বান্দা ঘরানার। অনেক সময় হাজার হাজার বছর টিকে থাকে।

এবার দেখা যাক, মহাকাশে মৃত্যু হলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াতে পারে। এ নিয়ে দ্য কনভারসেশন ডটকমে লিখেছেন যুক্তরাজ্যের টিসাইড ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লায়েড বায়োলজিক্যাল অ্যানথ্রোপলজির অধ্যাপক এবং হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সের ডিন টিম থম্পসন।

অন্যান্য গ্রহের ভিন্ন মাত্রার মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব দেহের পচনের লিভর মরটিস পর্যায়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। মাধ্যাকর্ষণ বল না থাকলে রক্ত এক জায়গায় জমা হওয়া শুরু হবে না।

শরীরে স্পেস স্যুট থাকলে অবশ্য রিগর মরটিস প্রক্রিয়া সচল থাকবে। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াও নরম টিস্যুগুলো গ্রাস করে নেবে। তবে এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর ঠিকঠাক কাজ করার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন। তাই বায়ুপ্রবাহ সীমিত হলে পচনের প্রক্রিয়াও ধীরে হবে।

মাটিতে থাকা জীবাণুও পচন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখে। সুতরাং কোনো গ্রহের পরিবেশ যদি এই জীবাণুগুলোর কাজে বাধা দেয়, তবে নরম টিস্যু সংরক্ষণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

পৃথিবীর তুলনায় ভিন্ন কোনো পরিবেশে পচনের ক্ষেত্রে বাহ্যিক প্রভাবকগুলোর কাজের প্রক্রিয়া বেশ জটিল হয়ে যাবে। যেমন কঙ্কালের ক্ষেত্রে। মানুষ বেঁচে থাকলে হাড়ও জীবন্ত অবস্থায় থাকে। এতে রক্তনালি ও কোলাজেনের মতো জৈব উপাদান যেমন থাকে, তেমনই ক্রিস্টাল হিসেবে অজৈব উপাদানও থাকে।

মঙ্গল গ্রহের রুক্ষ প্রান্তর যেমন। ছবি: পিক্সাবে
মঙ্গল গ্রহের রুক্ষ প্রান্তর যেমন। ছবি: পিক্সাবে

স্বাভাবিক কারণে জৈব উপাদানগুলোতে পচন ধরে, তাই আমরা জাদুঘরে যে কঙ্কালগুলো দেখি, সেগুলো কেবল অজৈব অবশিষ্টাংশ। তবে ভিন্ন গ্রহে তীব্র অ্যাসিডযুক্ত মাটি থাকতে পারে, সেখানে উল্টোটাও হতে পারে। অজৈব উপাদানও নিঃশেষ হতে পারে, থাকতে পারে কেবল নরম টিস্যুগুলো।

পৃথিবীতে মরদেহের পচনে শরীরের পুষ্টিকর পরিপোষকগুলো পোকামাকড়, জীবাণু, এমনকি উদ্ভিদের মতো জীবের মাধ্যমে রিসাইকেল হয়। তবে আমাদের সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলোতে এ ধরনের পোকামাকড় নেই। সুতরাং মানুষের দেহাবশেষের সদ্ব্যবহারের সুযোগ কম সেখানে।

তবে মঙ্গল গ্রহের মতো মরুভূমি ঘরানার শুষ্ক কোনো গ্রহের পরিবেশে হয়তো নরম টিস্যুগুলো শুকিয়ে যাবে। হয়তো পৃথিবীর মতো সেখানেও কঙ্কাল ক্ষয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।

পচনে তাপমাত্রাও বড় প্রভাবক। যেমন চাঁদে তাপমাত্রা ১২০ ডিগ্রি থেকে শূন্যের ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে পর্যন্ত হতে পারে। সেখানে অত্যধিক উষ্ণ কিংবা অত্যধিক শীতল পরিবেশের প্রভাব তো পড়বেই।

টিম থম্পসন লিখেছেন, তবে আমি মনে করি মানব দেহাবশেষের আকৃতি মানুষের মতোই থাকবে। কারণ, পচনের পুরো প্রক্রিয়া, পৃথিবীতে আমরা যেমনটা দেখি, তেমন হবে না।

সূত্র: দ্য কনভারসেশন ডটকম

    আরও পড়ুন

    মন্তব্য করুন

    Your email address will not be published.