রিফ্রেশ করলে কি আদৌ কম্পিউটারের গতি বাড়ে?

 রিফ্রেশ করলে কি আদৌ কম্পিউটারের গতি বাড়ে?

রিফ্রেশ করলে কম্পিউটারের গতি বাড়ে বলে মনে হয়

পরিচিত এক ব্যক্তির কথা মনে পড়ে গেল। তিনি জন্ম-মৃত্যু-বিয়ের মতো প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে কম্পিউটারের ডেস্কটপ ‘রিফ্রেশ’ করতেন। এক কোনা থেকে শুরু করে এগিয়ে যেতেন আরেক কোনার দিকে। ডেস্কটপের কোনো অংশ যেন রিফ্রেশের কবল থেকে বাদ না যায়, সেদিকে তাঁর পূর্ণ মনোযোগ।

পাঠক নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এখানে কোন রিফ্রেশের কথা বলা হচ্ছে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ডেস্কটপ কিংবা ফাইল এক্সপ্লোরারের ফাঁকা অংশে মাউসের ডান বোতামে ক্লিক করলে একটি মেনু বেরিয়ে আসবে। সেখান থেকে রিফ্রেশে ক্লিক করেননি, এমন কম্পিউটার ব্যবহারকারীর বড় অভাব এই বঙ্গদেশে। কেউ কেউ আবার শর্টকাট বোতাম হিসেবে কি-বোর্ডের ওপরের সারি থেকে F5 বোতামও চাপেন।

রিফ্রেশ করলে কম্পিউটারের গতি বাড়বে, সেটাই বোধ হয় আমাদের উদ্দেশ্য। যত বেশি রিফ্রেশ, কম্পিউটারে তত বেশি গতি। তবে সে ধারণা ঠিক নয়।

প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো ভেঙে দেওয়ার জন্য আছে মিথবাস্টার

তাহলে রিফ্রেশের কাজ কী?

রিফ্রেশের কাজ কিন্তু পুরোপুরি ভিন্ন। এটা ভিজ্যুয়াল ভুলত্রুটি মাফ করে, পারফরম্যান্সের না। মানে মনিটরে যা দেখানোর কথা, রিফ্রেশ করার পর সেটারই সংশোধিত রূপ দেখায়।

মনে করুন, আপনি ডেস্কটপ থেকে একটি ফাইল ডিলিট করেছেন। তবে অবাক হয়ে দেখলেন, সেটি এখনো ডেস্কটপেই দেখাচ্ছে। অথচ ফাইলটি সেখানে থাকার কথা নয়, বড়জোর রিসাইকেল বিনে থাকতে পারে।

কম্পিউটারের গতি কোনো কারণে কমে গেলে অনেক সময় এমন সমস্যা দেখা দেয়। এ অবস্থায় আপনি রিফ্রেশ চাপলে ফাইলটি আর আগের জায়গায় না দেখিয়ে রিসাইকেল বিনে দেখাবে। আর আকার বেশি বড় হলে রিসাইকেল বিনে না গিয়ে স্থায়ীভাবে মুছে যাবে। অর্থাৎ রিফ্রেশ করলে যা দেখানোর কথা, সেটাই ঠিকঠাকভাবে দেখাবে। কম্পিউটারের গতি বাড়াবে না।

তবে রিফ্রেশ করার পর গতি বেড়েছে বলে মনে হয় কেন?

কথা সত্য। রিফ্রেশ করার পর মনে হয়, কম্পিউটার যেন খানিকটা চাঙা হয়ে উঠল। সেটারও কারণ আছে।

কম্পিউটারে যখন এক উইন্ডো থেকে আরেক উইন্ডোতে যাওয়া হয়, তখন র‍্যাম থেকে অপারেটিং সিস্টেমের পেজ ফাইলে ডেটা বিনিময় হয়। এতে এক থেকে দুই সেকেন্ড লাগতে পারে। তখন সঙ্গে সঙ্গে অন্য কোনো কমান্ড দিলে কম্পিউটারের গতি কম মনে হয়। আর ঠিক ওই সময়ে গতি বাড়ানোর জন্য আমরা রিফ্রেশ করে থাকি।

এদিকে রিফ্রেশ করতে এক-দুই সেকেন্ড তো লেগেই যায়। ওই সময়ের মধ্যে কম্পিউটার তার গতি ফিরে পায়। অর্থাৎ আপনি যদি রিফ্রেশ না চেপে এমনিতেও খানিকটা সময় অপেক্ষা করেন, তবু একই ফল পাবেন।

রিফ্রেশ করলে অনেক সময় কম্পিউটারের গতি না বাড়িয়ে বরং কমিয়েও দিতে পারে। কারণ, রিফ্রেশের কারণে ডেস্কটপের দৃশ্যমান অংশ ঠিকঠাক করতে সিপিইউর প্রসেসিং পাওয়ারের খানিকটা খরচ তো হয়ই। তাই আপনার সিপিইউ যদি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে, তবে রিফ্রেশ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে দুই দিনের দুনিয়ায় এত ভেবে আর কী হবে। প্রাণ খুলে রিফ্রেশ করুন।

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.