স্মার্টফোনেও কি অ্যান্টিভাইরাস দরকার?
স্মার্টফোনে অনেক ব্যক্তিগত তথ্য থাকে। ছবি থাকে, ব্যাংকিং তথ্য থাকে, অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট বা অ্যাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগ-ইন করাও থাকে। স্বাভাবিক কারণেই আমরা এই তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। তবে কম্পিউটারে যেমনটা করা হয়, স্মার্টফোনের নিরাপত্তার জন্যও কি আমাদের অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ প্রয়োজন?
এ প্রশ্নের উত্তর এক বাক্যে দেওয়া সম্ভব না। কারণ এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে যেমন ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে পড়তে পারে, স্মার্টফোনে তেমনটা হয় না। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের উদাহরণ এখানে দেওয়া যেতে পারে।
অ্যান্ড্রয়েড মূলত লিনাক্স-নির্ভর মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। ডেস্কটপ কম্পিউটারের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের মতো ভাইরাস এর ক্ষতি করতে পারে না। সেদিক থেকে বললে, অ্যান্ড্রয়েডে অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলো ঠিক ভাইরাস নির্মূলের কাজ করে না। আবার এর মানে এই না যে অ্যান্ড্রয়েডে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাসে বলে কিছু নেই। তবে কাজের ধরন আলাদা।
স্মার্টফোনে ব্যবহারকারীর নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহের জন্যই মূলত ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দেয় হ্যাকাররা। এমন একটি ম্যালওয়্যারের নাম ট্রাইআউট। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে লুকিয়ে থেকে ফোন কল রেকর্ড কিংবা অবস্থান-সংক্রান্ত তথ্য পাঠিয়ে দিত হ্যাকারের কাছে।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমচালিত কম্পিউটারে যেমন ভাইরাস নিজে থেকে নেটওয়ার্কে যুক্ত অন্যান্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পাড়তে পারে, অ্যান্ড্রয়েডে ছড়ায় ফোনে ইনস্টল করা অ্যাপ থেকে। আর সে জন্যই কোথা থেকে অ্যাপটি নামাচ্ছেন, তা বুঝেশুনে ঠিক করা উচিত।
কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার আগে কী দেখবেন?
একান্ত প্রয়োজন না হলে গুগল প্লে স্টোরের বাইরে কোথাও থেকে অ্যাপ না নামানোই ভালো। গুগলের সেবাটি শতভাগ নিরাপদ বলা শতভাগ ঠিক না, তবে প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নত তো বটেই।
আবার প্লে স্টোরের সব অ্যাপে অন্ধবিশ্বাস আনা যাবে না। অ্যাপটি কারা বানিয়েছে, অ্যাপটির ব্যাপারে কতজন এবং কেমন পর্যালোচনা জানিয়েছেন, এসব পরখ করে দেখুন।
ইনস্টল করার আগে অ্যাপটি কী ধরনের অনুমতি চাচ্ছে, তা দেখুন। যদি মনে হয় অ্যাপটির কল রেকর্ড করার অনুমতির প্রয়োজন নেই, তবে সে অনুমতি দেবেন না। আবার অ্যাপ ইনস্টলের কোনো পর্যায়ে যদি মনে সন্দেহ থাকে যে সেটি কোনো ক্ষতি করতে পারে, তবে মনের কথায় সায় দিন।
এর বাইরে কখনো ক্ষতিকর ওয়েবসাইট থেকে ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার অনিরাপদ ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ফলে ফোনে ক্ষতিকর কোড ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। ভালো অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ বুঝতে পারে কোন ওয়েবসাইট আপনার জন্য ক্ষতিকর কিংবা আপনার অজান্তে কোনো অ্যাপ কোনো তথ্য পাঠিয়ে দিচ্ছে কি না।
অবশ্য একদম নতুন ধরনের কোনো ম্যালওয়্যার তৈরি করে যদি ছড়িয়ে দেওয়া হয়, অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলো সেটি শনাক্ত শুরু করতে খানিকটা সময় নেয়। এই ফাঁকে ক্ষতি যা করার, তা করে ফেলে হ্যাকাররা।
তাহলে কি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করব না?
করবেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজে সচেতন থাকা। চট করে কোথাও থেকে অ্যাপ নামাবেন না। অ্যাপ ইনস্টল করার পর যেসব অনুমতি চাচ্ছে, সেগুলো পড়ে দেখে বুঝেশুনে তবেই সম্মতি জানান। আর ফোনের অ্যাপ সব সময় হালনাগাদ রাখুন।
অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপের ব্যাপারে একটি বিষয় মাথায় রাখতে পারেন। যত বেশি দরজা ভেঙে প্রবেশ করতে হয়, চোরের ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়তে থাকে। অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টলের মাধ্যমে ফোনের নিরাপত্তার স্তর আরেকটি তো বাড়ল। সেটাই বা কম কিসে?
কোন অ্যাপটি ভালো?
ক্যাসপারস্কি, বিটডিফেন্ডার, ম্যাকাফি, সিমান্টেক, অ্যাভাস্ট, এভিজি, ট্রেন্ড মাইক্রো—এগুলো তুলনামূলক ভালো কাজ করে বলে স্বীকৃত।
তবে অস্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এভি-কমপ্যারাটিভসের গবেষকেরা আড়াই শ অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ পরীক্ষা করে দেখলেন সেগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ কোনো কাজই করে না। আবার জনপ্রিয় অনেক অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপে ভাইরাস শনাক্তের প্রতিবেদনে অত্যুক্তি করা হয়। অ্যাপটি যে খুব কাজের, প্রচুর ম্যালওয়্যার শনাক্ত করছে এবং আপনি সেটি ইনস্টল করে যে জীবনের সেরা সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন, তা বোঝানোর চেষ্টা করে।
অনেক সময় বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়, আপনার স্মার্টফোন ভাইরাসে আক্রান্ত, পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হিসেবে এখনই অ্যাপটি ইনস্টল করুন। সেসব বিশ্বাস করারও কোনো কারণ নেই।
সূত্র: টেকঅ্যাডভাইজর, এক্সট্রিম টেক