চীনে ফেসবুক বন্ধের আসল কারণ কী
চীনে কেবল ‘গ্রেট ওয়াল’ নয়, ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল’ও আছে। এই ফায়ারওয়ালের জোরেই দেশটিতে ফেসবুকসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বহু ওয়েবসাইট ও ডিজিটাল সেবার ব্যবহার বন্ধ রেখেছে চীনা সরকার। অনেকে বলেন, তথ্যের আদান-প্রদান ঠেকাতেই চীনে ফেসবুক বন্ধ। অর্থাৎ সেন্সরশিপের কথা বেশি শোনা যায়। সে কথা ঠিক। তবে মূল কারণ কিন্তু ভিন্ন।
২০০৯ সালের জুলাইয়ে পশ্চিম চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল জিনজিয়াংয়ের স্বাধীনতা দাবি নিয়ে জাতিগত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সেটি উরুমচি দাঙ্গা হিসেবে পরিচিত। আন্দোলনকারীরা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ফেসবুক। চীনা সরকার ফেসবুকের কাছে আন্দোলনকারীদের তথ্য চেয়ে বসে। ফেসবুক তাদের নীতিমালা দেখিয়ে সে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সে ঘটনার পরপরই চীনে ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশ্লেষকদের ধারণা, উরুমচি দাঙ্গার সূত্র ধরেই চীন সরকার সে উদ্যোগ নিয়েছিল।
এরপর ফেসবুকের বহু শীর্ষ কর্মকর্তা চীন ভ্রমণে গিয়েছেন। বহু দেনদরবার করেছেন। এমনকি প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার চীন থেকে ঘুরে এসেছেন। দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছেন। মাস্ক ছাড়াই দূষিত বাতাসের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে দৌড়েছেন। তবে সুবিধা করে উঠতে পারেননি।
গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না
চীনের ডিজিটাল জগতে সরকারের নজরদারির কথা এখন মোটামুটি সবারই জানা। অনেক ওয়েবসাইট সেখানে দেখা যায় না। চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও চাইলেই সব শব্দ লেখা যায় না। যখন-তখন গ্রেপ্তারের ব্যাপার তো আছেই। বেশ কিছু সরকারি সংস্থার ওপর ইন্টারনেটে নজরদারির দায়িত্ব ছিল। সেগুলোকে এক করে ২০১৪ সালে সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব চায়না গঠন করা হয়। এখন সে সংস্থাটিই ইন্টারনেটে সেন্সরশিপের দায়িত্বে রয়েছে।
চীনের মহাপ্রাচীরের (ইংরেজিতে গ্রেট ওয়াল) সঙ্গে মিলিয়ে দেশটির ইন্টারনেট সেন্সরশিপকে লোকে ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল’ হিসেবে ডাকতে শুরু করেছে। বিবিসি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর মতো অনেক বিদেশি সংবাদমাধ্যম বন্ধ আছে চীনে। আর ওয়েব সেবার মধ্যে ফেসবুকের পাশাপাশি গুগল, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, ইয়াহু, স্ল্যাক ও ইউটিউবও ব্যবহার করা যায় না।
এগিয়েছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো
গ্রেট ফায়ারওয়ালের জন্য চীনে বিদেশি ডিজিটাল সেবাদাতারা আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। এতে সুবিধা পেয়েছে স্থানীয় স্টার্টআপগুলো। চীনে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আলিবাবা ও জেডি ডটকম, সার্চ ইঞ্জিন বাইদু, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবো, বার্তা আদান–প্রদানের জন্য কিউকিউ ও উইচ্যাট এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। বিদেশি ইন্টারনেটনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবেশের সুযোগ পেলে চীনের স্থানীয় সেবাগুলো তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ত।
চাইলে চীনেও ফেসবুক ব্যবহার করা যায়
চীনে ফেসবুক বন্ধ হলেও ফেসবুকের ব্যবহার কিন্তু পুরোপুরি আইনবিরুদ্ধ নয়। বিদেশি নাগরিকেরা সেখানে ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে বন্ধ করে রাখা ওয়েবসাইটগুলো দেখতে পারেন। কেবল সরকার বা তাদের নীতিমালাবিরুদ্ধ কিছু পোস্ট করা চলবে না। তা ছাড়া বন্ধ থাকলেও স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে চীন থেকে বেশ বিজ্ঞাপনী আয় করে ফেসবুক। আবার চীনা সংবাদমাধ্যমগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তাদের বার্তাও ছড়িয়ে দিচ্ছে।