বয়স্করা হাল আমলের গান পছন্দ করেন না কেন

 বয়স্করা হাল আমলের গান পছন্দ করেন না কেন

মানুষের মনে সংগীতের রুচি দানা বাঁধতে শুরু করে ১৩-১৪ বছর বয়স থেকেই। ছবি: আনস্প্ল্যাশ

‘গান গাইতেন হেমন্ত। আহা কী গলা! কী গায়কী! এখনকার ছেলেছোকরা কী সব চিৎকার-চেঁচামেচি করে সারা দিন। হয় না কিছুই।’

এই ছেলেছোকরারা চিৎকার-চেঁচামেচি করে ঠিক। তবে বয়স্করা কেন মনে করেন সেটা কিছুই না, আমাদের আলোচ্য বিষয় আজ সেটাই।

আপনি দেখবেন ‘এখন আর আগের মতো গান কই হয়’ মনোভাব সবার মধ্যেই আছে। আপনার বাবার মধ্যে যেমন পাবেন, দাদার মধ্যেও পাবেন। আপনি নিজে বাবা বা মা হয়ে থাকলে দেখবেন সন্তানের পছন্দের গানগুলো আপনার কাছে ওই চিৎকার-চেঁচামেচিই ঠেকছে। এর কারণ কী?

মানুষের মনে সংগীতের রুচি দানা বাঁধতে শুরু করে ১৩-১৪ বছর বয়স থেকেই। বয়স ২৫ হতে হতে এই রুচি পাকাপোক্ত হয়ে যায়। কিছু কিছু গবেষণা তো বলে, বয়স ৩৩ বছর পেরোলে বেশির ভাগ মানুষ নতুন গান শোনা বন্ধ করে দেয়। ফলে আপনার কৈশোরে শোনা জনপ্রিয় গানগুলোই আপনার সমবয়সীদের মধ্যে জীবনভর জনপ্রিয় হয়ে থাকবে।

এটা অবশ্য মনস্তাত্ত্বিক দিক। একটি দেহতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাও দাঁড় করানো যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সুর-তাল-ছন্দের সূক্ষ্ম পরিবর্তন ধরার ক্ষমতা কমতে থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। হতে পারে, বয়স্ক মানুষের কাছে নতুন কম জনপ্রিয় গানগুলো সব একরকম শোনায়।

কৌতূহল যাদের বেশি, তাদের জন্য অহেতুক সব প্রশ্নের উত্তর আছে এখানে
মনস্তাত্ত্বিক তো বটেই, এর একটি দেহতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাও দাঁড় করানো যায়। ছবি: আনস্প্ল্যাশ
মনস্তাত্ত্বিক তো বটেই, এর একটি দেহতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাও দাঁড় করানো যায়। ছবি: আনস্প্ল্যাশ

আরেকটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আছে। ইংরেজিতে ‘মেয়ার এক্সপোজার ইফেক্ট’ বলে একটা কথা আছে। যে জিনিসের সংস্পর্শে আমরা যত বেশি আসি, সেটা আমাদের তত পছন্দের হতে পারে। মানুষের বেলায় এটা প্রযোজ্য। বিজ্ঞাপনের বেলাতেও। সংগীতেও এই তত্ত্ব খাটে।

হতে পারে তারুণ্যে আপনি গান শোনা কিংবা মিউজিক ভিডিও দেখায় বেশ সময় ব্যয় করেছেন। সে সময়ের আপনার পছন্দের গান ও শিল্পী জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।

বয়স ৩০ পেরোনোর পর কর্মজীবন আর পরিবার সামলাতে গিয়ে অনেকটা সময় চলে যায়। তখন নতুন পছন্দের গান খুঁজে নেয়ার সময় না-ও মিলতে পারে। ফলে পুরোনো পছন্দের গানগুলোই বারবার শুনতে থাকি আমরা।

তা ছাড়া কৈশোরে আমাদের আবেগ থাকে বেশি। আর তীব্র আবেগের সঙ্গে স্মৃতি আর পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারগুলো জড়িয়ে থাকে। কৈশোরের পছন্দের গানগুলোই আজীবন শুনতে থাকার মজা সেটাও একটা কারণ হতে পারে।

সুতরাং বাবা-মা আপনার পছন্দের গানগুলো নিজের পছন্দের তালিকায় না রাখলে গাল ফুলিয়ে থাকবেন না। এটাকে স্বাভাবিক প্রকৃতি প্রদত্ত ব্যাপার বলেই মেনে নিন। অবশ্য সবার বেলায় সব নিয়ম খাটে না। এতক্ষণের আলোচনার বাইরেও দেখবেন অনেকেই জীবনভর নতুন সংগীতের খোঁজ করে গেছেন, নতুন সংগীত ভালোবেসেছেন।

দ্য কনভারসেশন ডটকম অবলম্বনে

    আরও পড়ুন

    মন্তব্য করুন

    Your email address will not be published.