নগরবাসী বুঝল এবার শক্ত না হলেই নয়

 নগরবাসী বুঝল এবার শক্ত না হলেই নয়

শহরের বাসিন্ধাদের নিয়ে প্রায়ই আন্দোলন করতেন সুধা সিনহা

চলতি বছরের জানুয়ারির খবর। অতলে চলে যাচ্ছে ভারতের জোশীমঠ। ভূমিতে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়ায় হিমালয়ের কোলঘেঁষা এই নগরীর পথঘাট-দালান সব দেবে যাচ্ছে। আতঙ্কে নগরবাসী ঘর ছেড়েছেন।

অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ এবং অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি নিষ্কাশনের ফলে জোশী মঠের এই নিয়তি ভারতের আরও অনেক শহরের হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। হয়েছেও তাই। বড় উদাহরণ দিল্লির দ্বারকা। তবে নগরবাসী ও স্থানীয় প্রশাসনের চেষ্টায় কীভাবে শহর রক্ষা হলো, সে গল্পই শুনিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

দিল্লি বিমানবন্দরের কাছাকাছি থাকতে চেয়েছিলেন সুধা সিনহা। আবার সবুজের ছোঁয়াও চেয়েছিলেন। সবকিছু মাথায় রেখে ১৯৯৮ সালে সপরিবারে দ্বারকায় বাসা বাঁধেন ৫৪ বছর বয়সী এই নারী।

দ্বারকায় মূল সমস্যা হলো, সেখানে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। দৈনন্দিন কাজে গভীর নলকূপের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে ব্যবহার করেন এলাকার বাসিন্দারা।

সময়ের সঙ্গে দ্বারকায় মানুষ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে নলকূপও। পানির স্তর যত নেমেছে, তত দীর্ঘ হয়েছে পাম্পের নল। পানির চাহিদা মেটাতে কোথাও কোথাও ৬০ মিটার পর্যন্ত খুঁড়তেও বাকি রাখেননি নগরবাসী।

পুরোনো কথা মনে করে বিবিসিকে সুধা বলেন, ‘মাশরুমের মতো বাড়তে থাকে আবাসিক ভবন, বাজার ও স্কুল। সবাই ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করত।’

কাজে লাগালেন স্যাটেলাইট-ছবি

অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি নিষ্কাশনের সমস্যা হলো এতে ওপরের ভূমির স্তর দেবে যায়। দ্বারকায় তা-ই ঘটেছে বলে সরকারি এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, কেবল ২০১৪ সালেই এলাকাটি সাড়ে তিন সেন্টিমিটার ডুবেছে।

নগরবাসী বুঝলেন এবার শক্ত ব্যবস্থা না নিলেই নয়। সে চেষ্টায় এগিয়ে আসে স্থানীয় প্রশাসন। নিরুপায় হয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে সরকার। যেসব ভবনে গভীর নলকূপ সচল ছিল, তাদের বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়। আর এলাকাবাসী বৃষ্টি ও ভূপৃষ্ঠস্থ পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। ফলও মেলে হাতেনাতে।

বিশ্বজুড়ে অন্যরকম খবরগুলো দেখুন

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবির সাহায্যে দিল্লির ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিয়ে গবেষণা করছিলেন শাগুন গার্গ। বিবিসিকে তিনি বলেন, রাজধানী এবং শহরতলির কিছু এলাকা দেবে গেলেও দ্বারকা অদ্ভুতভাবে আগের অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করে।

দিল্লি সরকার অবশ্য শুরুতেই দ্বারকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখেনি। সেটা এলাকাবাসীর আন্দোলনের ফল।

সরকার শুরুতে ট্যাংকারে করে পানি দেয়া শুরু করে। প্রথমত সে পানি যথেষ্ট নয়। আবার খরচও বেশি। প্রতিবাদে ২০০৪ সালে প্রতিবেশীদের সঙ্গে পথে নামেন সুধা সিনহা। পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের দাবি জানান তারা। গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন, গণবিক্ষোভে অংশ নেন, দাবি না মানলে স্থানীয় নির্বাচন বয়কটের হুমকি পর্যন্ত দেন। এতে কাজ হয়।

অবশেষে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমল

২০০০ সালের মাঝামাঝি দ্বারকায় সরবরাহ পানির ব্যবস্থা করে সরকার। ২০১১ সাল নাগাদ সব ভবনে পানির পাইপ পৌঁছেও যায়। ২০১৬ সালের মধ্যে এলাকার আবাসিক ভবনগুলোতে গভীর নলকূপের ব্যবহার প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপও কমে আসে।

ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়ানোয় জোর দেয় সরকার। মোট ১০০ একরের বড় দুটি স্থানীয় লেক নতুন করে কাজে লাগানো হয়। এতে কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২০ মিটার থেকে ১৬ মিটারে উঠে আসে।

এদিকে ২০০ বছরের পুরোনো এক জলাধার কাজে লাগাতে স্থানীয় অধিবাসীরা একযোগে কাজ শুরু করেন। লেকটি প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল। সেটির আগাছা ও পলি পরিষ্কার করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন।

নগর পরিকল্পনাবিদ বিকাশ কানোজিয়া বলেন, ‘পুরোনো জলাধার নবায়ন এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ায় দ্বারকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। এতে ভূমির স্তর আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। দিল্লি তথা ভারতের অন্যান্য এলাকার জন্য এটা মডেল হতে পারে।’

আরও পড়ুন: মহাকাশে ঢেকুর তোলা যায় না কেন?

    আরও পড়ুন

    মন্তব্য করুন

    Your email address will not be published.