মহাকাশে দূরত্ব মাপা হয় আলোকবর্ষে, কেন মাইল-কিলোমিটারে নয়?

 মহাকাশে দূরত্ব মাপা হয় আলোকবর্ষে, কেন মাইল-কিলোমিটারে নয়?

হাবল টেলিস্কোপে উজ্জ্বল নক্ষত্রটি ধরা পড়ে, এর অবস্থান আমাদের ছায়াপথেই। ছবি: নাসা

মহাকাশে দূরত্ব মাপা হয় আলোকবর্ষে। শব্দটিতে ‘বর্ষ’ থাকলেও সেটি দূরত্ব মাপার একক, সময়ের নয়। এক বছরে আলো যতটুকু দূরত্ব পেরোয়, সেটিকে আমরা এক আলোকবর্ষ বলি। সেই দূরত্বকে আমরা মাইল-কিলোমিটারেও প্রকাশ করতে পারি। যেমন এক আলোকবর্ষ ৫ লাখ ৮৭ হাজার কোটি মাইলের সমান, কিলোমিটারে ৯ লাখ ৪৬ হাজার কোটি। তবু মহাকাশে দূরত্ব মাপা হয় আলোকবর্ষে, মাইল-কিলোমিটারে নয় কেন?

স্পেস ডটকমে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বের মতো বিশাল পরিসরে মাইল বা কিলোমিটারে পরিমাপ ঠিক ‘পোষায়’ না। ব্যাপারটা অনেকটা হাঁটাপথে দূরত্ব মাপার মতো। যেমন আমরা বলি, হেঁটে গেলে ২৫ মিনিট লাগবে, জ্যাম না থাকলে বাসে ৪৫ মিনিটের রাস্তা ইত্যাদি। আর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নক্ষত্র থেকে আমাদের কাছে আলো আসতে যত সময় লাগে, সে হিসাবে নক্ষত্রের দূরত্ব মাপেন। যেমন, সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টারাই পৃথিবী থেকে ৪ দশমিক ২ আলোকবর্ষ দূরে।

এক আলোকবর্ষ কত দূর?

গাড়িতে কোথাও যাওয়ার সময় যেমন গতি ওঠানামা করতে পারে, আলোর গতি তেমন নয়। মহাশূন্যে আলোর গতি অপরিবর্তনীয়। ঘণ্টায় ৬৭ কোটি ৬ লাখ ১৬ হাজার ৬২৯ মাইল বা ঘণ্টাপ্রতি ১০৭ কোটি ৯২ লাখ ৫২ হাজার ৮৪৯ কিলোমিটার।

এক আলোকবর্ষের দূরত্ব জানতে চাইলে এই সংখ্যাকে এক বছরের মোট ঘণ্টার সংখ্যা (৮ হাজার ৭৬৬) দিয়ে গুণ করতে হবে। অর্থাৎ এক আলোকবর্ষ মানে ঘণ্টায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬২ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার মাইল। সংখ্যাটির দিকে চোখ দিলে দূরত্বটাকে ব্যাপক মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তবে মহাবিশ্বের আকার মাথায় রাখলে, সেটি তেমন কিছুই না।

মূল ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস
মূল ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস
মহাকাশ নিয়ে কৌতূহল থাকলে এখানে ক্লিক করুন

মহাকাশে আলোকবর্ষে দূরত্ব মাপা হয় কেন?

মহাজাগতিক হিসাব-নিকাশে মাইল-কিলোমিটারে হিসাব রাখা বেশ কষ্টসাধ্য, অবাস্তবও। যেমন কালপুরুষ নীহারিকা আমাদের কাছ থেকে ৭৮ কোটি ৬১ লাখ কোটি মাইল দূরে। অন্যভাবে বললে ১৩০০ আলোকবর্ষ দূরে।

আমাদের গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের কেন্দ্র পৃথিবী থেকে ২৭০০ আলোকবর্ষ দূরে। অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের দূরত্ব ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। আবিষ্কৃত অনেক ছায়াপথের অবস্থান কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে। এই দূরত্বকে মাইল-কিলোমিটারে প্রকাশ করার কোনো মানে হয় না।

আলোকবর্ষে হিসাব করার আরেকটি সুবিধা হলো, নক্ষত্রের যে দৃশ্য আমরা এখন দেখছি, সেটি কত আগের, তা জানা যায়। রাতের আকাশে আমরা যা দেখি, তা বেশ আগেই ঘটে গেছে। আলো আমাদের চোখে এসে পৌঁছাতে সময় লেগেছে। আকাশে এক আলোকবর্ষ দূরের কিছু এখন দেখা মানে সেটি ঠিক এক বছর আগের ছবি। অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি দেখা মানে ছায়াপথটির আড়াই লাখ বছর আগের চিত্র দেখা।

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.