অ্যাপল ছাড়াও স্টিভ জবসের সফল দুটি প্রতিষ্ঠান

 অ্যাপল ছাড়াও স্টিভ জবসের সফল দুটি প্রতিষ্ঠান

স্টিভ জবস তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন আরও সফল দুটি প্রতিষ্ঠান গড়তে

অ্যাপল প্রতিষ্ঠার জন্যই স্টিভ জবসের যত খ্যাতি। সে তো হওয়াই উচিত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বানিয়েছেন। আর ব্র্যান্ড মূল্যের বেলায় এক নম্বর। আর তাতে যাওয়ার তা-ই হয়েছে। এই মহিরুহের ছায়ার আড়ালে পড়ে গেছে তাঁর অন্যান্য সফল উদ্যোগগুলো।

জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন আরও সফল দুটি প্রতিষ্ঠান গড়তে। এর একটি নেক্সট, অন্যটি পিক্সার। প্রথমটি কম্পিউটার বানাত, পরেরটি অ্যানিমেশন স্টুডিও।

এখানে ক্লিক করে সর্বশেষ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন

অ্যাপল থেকে বেরিয়ে আরেক অ্যাপল

১৯৮৫ সালে অ্যাপল থেকে পদত্যাগ করেন স্টিভ জবস। কিংবা তাঁকে বিতাড়িত করা হয়। বেরিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন নেক্সট (NeXT)। অ্যাপলে যে লক্ষ্যে এগিয়েছিলেন, নেক্সটেও তাই করলেন। ব্যবসায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার তৈরি শুরু করেন নেক্সটের মাধ্যমে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার কম্পিউটার বিক্রি করেছিলেন। জবস যতটা ভেবেছিলেন, নেক্সট ততটা সফল হয়তো হয়নি। তবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিতে বাকি রাখেনি।

অ্যাপল থেকে বিতাড়িত হয়ে নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন স্টিভ জবস

নেক্সটকিউব ওয়ার্কস্টেশনেই প্রথম ওয়েব সার্ভার এবং ওয়েব ব্রাউজার সফটওয়্যার বানিয়েছেন টিম বার্নার্স-লি। এ কম্পিউটারেই ‘উলফেনস্টাইন থ্রিডি’ এবং ‘ডুম’ ভিডিও গেমের প্রোগ্রাম লিখেছেন জন কারম্যাক। গেম দুটি সর্বকালের প্রভাবশালী গেমগুলোর মধ্যে অন্যতম ধরা হয়।

তার চেয়েও বড় কথা, সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও চড়া দামেই নেক্সট বিক্রি করেন স্টিভ। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন অ্যাপল কম্পিউটার কিনে নেয় নেক্সট। বিনিময়ে নেক্সটের বিনিয়োগকারীরা পান নগদ ৪২ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং স্টিভ জবস পেয়েছিলেন অ্যাপলের ১৫ লাখ ডলার মূল্যের শেয়ার। সে সময় অ্যাপলের শেয়ার প্রতি দাম ছিল ৬ ডলারের আশপাশে। বর্তমানে ২৫৭ ডলারের আশপাশে দাম ওঠানামা করছে। ব্যবসায়ী হিসেবে স্টিভকে সফল না বলে উপায় নেই।

আরও পড়ুন: স্মার্টফোন একবার চার্জ করলে কত টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়

হাত দিলেন অ্যানিমেশনে

কম্পিউটার কম বিক্রি করলেও নেক্সট বিফলে যায়নি। প্রতিষ্ঠানটি ‘নেক্সটস্টেপ’ নামের যে অপারেটিং সিস্টেমটি বানিয়েছিল, আজকের ম্যাক ওএস এক্সের মধ্যে আজও তা বেঁচে আছে। অন্যদিকে পিক্সারে স্টিভ জবসের ভূমিকা ছিল মূলত বিনিয়োগকারী হিসেবে। এই প্রতিষ্ঠান চমৎকার সফলতা নিয়ে আসে। অ্যানিমেশন স্টুডিও হিসেবে আজও খ্যাতির চূড়ায় রয়েছে।

লুকাসফিল্মের কাছ থেকে ১৯৮৬ সালে ৫০ লাখ ডলারে পিক্সার কিনে নেন স্টিভ জবস। নিজে বিনিয়োগ করেন আরও ৫০ ডলার। ২০০৬ সালে ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির কাছে ৭৪০ কোটি ডলারে পিক্সার বিক্রি করেন। সে সময় ডিজনির সবচেয়ে বড় একক শেয়ারহোল্ডারে পরিণত হন স্টিভ।

(বাঁ থেকে) পিক্সার সহপ্রতিষ্ঠাতা এডুইন ক্যাটমাল, স্টিভ জবস এবং শুরুর দিকের কর্মী জন ল্যাসেটার

যা হোক, প্রথমে পিক্সারকে উচ্চ মানের কম্পিউটার যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বানাতে চেয়েছিলেন স্টিভ জবস। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘পিক্সার ইমেজ কম্পিউটার’ বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ছিল ডিজনি। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১৯৯০ সালে তিনটি সিজিআই অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরির ফরমাশ পেয়েছিল পিক্সার। এর প্রথমটি ‘টয় স্টোরি’। ইতিহাসে সেটাই প্রথম সম্পূর্ণ সিজিআই-নির্ভর অ্যানিমেশন ছবি।

বিশ্বব্যাপী ৩৬ কোটি ডলার আয় করে ‘টয় স্টোরি’। বক্স অফিসে ভালো করে পিক্সার ফিল্মস। দর্শকেরা পছন্দ করেছিলেন, চলচ্চিত্র সমালোচকেরাও বাহবা দিয়েছিলেন।

অ্যাপলের কাছে নেক্সট বিক্রির পর তাঁর চিরচেনা রূপে ফেরেন স্টিভ জবস। কিছুদিন পরেই অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর আসনে বসেন। ব্যর্থতার দোরগোড়া থেকে সফলতার পথে এগিয়ে নেন। সফলতম প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বানান। বাকি ইতিহাস আমাদের জানা।

আরও পড়ুন: সুন্দর পিচাই যেভাবে গুগলের সিইও হলেন

তবে একটা বিষয় পরিষ্কার—কিংবা স্টিভ জবস পরিষ্কার করেছেন—অ্যাপলের সাফল্য কোনো কাকতাল না। স্টিভের ছোঁয়া পেয়েছিল বলেই সোনায় পরিণত হয়েছিল অ্যাপল।

    আরও পড়ুন

    মন্তব্য করুন

    Your email address will not be published.