আইফোনের চার্জিং কেবল দ্রুত ভেঙে যায় কেন
![আইফোনের চার্জিং কেবল দ্রুত ভেঙে যায় কেন](https://www.thewindowshow.com/wp-content/uploads/2023/02/eiphone_sarj_almiyor-850x560.jpg)
আইফোনের চার্জিং কেবল দ্রুত ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। ছবি: সংগৃহীত
মনে করুন, বাঁ পাশের কিডনি বেচে আপনি নতুন একটি আইফোন কিনেছেন। ক্যামেরা এতই ভালো যে ছবিতে নিজেকে চেনা যায় না। প্রসেসর-র্যামের দুর্দান্ত গতিতে কমান্ড না দিলেও কাজ হয়। সব মিলিয়ে চমৎকার স্মার্টফোন। সমস্যা একটাই।
দিন কয়েক ব্যবহারের পর চার্জিং কেবল, অর্থাৎ আইফোনের চার্জ করার তারের গোড়ার দিক থেকে চট করে ভেঙে যায় (ওপরের ছবিতে দেখুন)। আঘাতটা তখন যেন ডান কিডনিতেও এসে লাগে।
আগে ভাবতাম, আমার আশপাশের আইফোন ব্যবহারকারীরাই বুঝি এই সমস্যায় ভোগেন। তবে দু-চারটে ওয়েবসাইটে গুঁতাগুঁতি করে বুঝলাম, এটা সর্বজনীন সমস্যা। সমাধান মেলেনি ঠিক, তবে সম্ভাব্য কারণটা খুঁজে পেয়েছি।
শুধু আইফোন নয়, আইপড, আইপ্যাড ও ম্যাকবুকের চার্জিং কেবলও খুব একটা টেকসই হয় না। তবে সে সমস্যা কিন্তু অ্যাপলের জন্মলগ্ন থেকে নয়। ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাপী অ্যাপল ব্যবহারকারীরা চার্জিং কেবল ভেঙে যাওয়ার কথা বেশি জানাতে থাকেন। এর কারণ দুটি।
প্রথম কারণটা হলো, পণ্যের নকশায় অ্যাপল সব সময় দৃশ্যমান আবেদনে গুরুত্ব দিয়েছে। কার্যকারিতাও অ্যাপলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তবে ডিজাইন বিভাগের কর্মীদের সিদ্ধান্তই শেষমেশ চূড়ান্ত হয়।
![ম্যাকবুকের চার্জিং কেবলের আগের ও পরের নকশা। মূল ছবি: অ্যাপল ইনসাইডার](https://www.thewindowshow.com/wp-content/uploads/2023/02/before_after.jpg)
অ্যাপলের ডিজাইন টিমের কাছে হঠাৎ মনে হলো, চার্জিং কেবলের যেদিকটা ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, সেদিকটার তুলনামূলক মোটা ও খাঁজকাটা অংশটুকু (ছবিতে দেখুন) বেশ দৃষ্টিকটু। তারা সেটি বদলে কিছুটা পাতলা করে দিলেন, বাদ গেল শক্তপোক্ত খাঁজকাটা অংশটুকুও। অথচ ওই অংশ যোগ করা হয় মূলত বারবার কেবল ডিভাইসে যুক্ত করার চাপ সামলানোর জন্যই।
অ্যাপলের প্রকৌশলীরা বুঝতে পেরেছিলেন, নতুন নকশার কেবল দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে। তবু সেভাবেই বাজারে ছাড়া হয়। আইপড, ম্যাকবুক ও শেষমেশ আইফোনের পাওয়ার কেবলেও নতুন নকশা যুক্ত করা হয়। এরপর ২০০৭ সালের দিকে চার্জিং কেবল ভেঙে যাওয়ার খবর জানাতে শুরু করেন অ্যাপলের পণ্য ব্যবহারকারীরা। সে সমস্যা এখনো রয়ে গেছে।
![অ্যাপলের পণ্যের ব্যবহারকারীরা এই ছবিগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কথা। ছবি: অ্যাপল ইনসাইডার](https://www.thewindowshow.com/wp-content/uploads/2023/02/iphone_ipod_imac.jpg)
এবার দ্বিতীয় কারণটা বলা যাক। অ্যাপলের প্রয়াত সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভ জবস ‘আ গ্রিনার অ্যাপল’ শীর্ষক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সে উদ্যোগের অংশ হিসেবে অ্যাপলের পণ্য থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বাদ দেওয়া শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল পলিভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি প্লাস্টিক। পিভিসি উপাদান পাওয়ার কেবলের স্থায়িত্ব বাড়ায়।
পিভিসি বাদ দেওয়ায় চার্জিং কেবলে যুক্ত হয় পাতলা রাবারের আবরণ। এতে যেমন কেবল বাঁকানো সহজ হয়, তেমনই সহজে ভেঙেও যেতে থাকে। আর এর ভুক্তভোগী হন ব্যবহারকারীরা। কারণ, অ্যাপলের অ্যাকসেসরিজ বা অনুষঙ্গের দাম বরাবরই চড়া। আর চড়া দামে পণ্য কিনে দুটো দিন শান্তিতে ব্যবহার না করা গেলে আফসোস থেকেই যায়।
অ্যাপলের চার্জিং কেবলের সমস্যাটি এখনো আছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি যে সে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, তা-ও বোঝা যায়। হোমপড ও আইম্যাকের জন্য ধাতব তারের ওপর সুতার বুননে তৈরি মোড়ক যুক্ত করা শুরু করেছে। কে জানে হয়তো ভবিষ্যতের আইফোনগুলোতেও আমরা এমন কেবল দেখতে পাব।