সাইকেলে ভ্রমণের সেরা পাঁচ শহর
বাইসাইকেলে ভ্রমণের একটা সুবিধা হলো, এতে পঞ্চেন্দ্রিয়র সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়। মানে শহরের রূপ-রস-গন্ধ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা যায়। পায়ে হেঁটে ভ্রমণেও সে সুযোগ থাকে। তবে সবাই তো আর উসাইন বোল্ট নয়—গতির প্রশ্ন এসেই যায়। গাড়িতে গতি পেলেও ওই রূপ-রস-গন্ধের পুরোটা মেলে না। যা হোক, লেখার বিষয় যেহেতু সাইকেল-বান্ধব শহর, দুই চাকার এই বাহনকে সেরা না বানিয়ে আজ আমরা ছাড়ছি না।
সাইকেলে ভ্রমণের সেরা শহরগুলোর তালিকা তৈরির সময় গুরুত্ব পায় তিনটি বিষয়। প্রথমটা হলো, শহরের অবকাঠামো। সাইকেল চালানোর বিশেষায়িত পথ (বাইক লেন), পথে পথে ভাড়ায় সাইকেল প্রাপ্তির দোকান, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সান্নিধ্যের মতো বিষয়গুলো এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়। দ্বিতীয়ত, সাইকেল চালকদের প্রতি শহরের পথচারী ও গাড়ির চালকদের মনোভাব। সবশেষে, সাইকেলে ভ্রমণ করলে যেন সহজে শহর দেখা যায়, তা-ও জরুরি। এই তিন বিবেচনায় বিশ্বের সেরা পাঁচ শহরের নাম থাকছে এখানে।
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম
সাইকেল চালানোর বেলায় আমস্টারডামের ধারেকাছে কোনো শহর হয় না বলে একবাক্যে মানেন সবাই। ঐতিহ্য ধরে রাখার বিষয় তো আছেই, পুরো শহরটাই সাইক্লিস্টদের স্বর্গ বলা যেতে পারে। আর নতুন শহরের পরিকল্পনার সময় আমস্টারডামকে আদর্শ মানেন স্থপতিরা। অনেকে বলেন, নিকটবর্তী ইউট্রেখট শহরের বাইক লেনগুলো তুলনামূলক ভালো। সে হতে পারে। তবে সব মিলিয়ে আমস্টারডামকে সেরা মানতেই হবে। শহরটা সমতল, স্থাপত্যকলা দারুণ, আর শহরজুড়ে সাইকেল পার্ক করার জায়গার অভাব নেই।
জীবনটাকে আরেকটু সহজ করতে লাইফস্টাইল নিয়ে আরও লেখা পড়ুন
ডেনমার্কের কোপেনহেগেন
নেদারল্যান্ডসের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশের মানুষদের সাইকেল প্রীতিরও খ্যাতি আছে। এই অঞ্চলের মোটামুটি সব শহরই সাইক্লিস্টদের জন্য ভালো। আর ভালোদের ভালো হলো কোপেনহেগেন। ২০১৬ সালের তথ্য যদি দেখি, গাড়ির চেয়ে সেখানে বাইসাইকেল বেশি। ৬২ শতাংশের বেশি অধিবাসী সাাইকেল চালিয়ে কাজে যান। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাইসাইকেলের জন্য চমৎকার মহাসড়কের সঙ্গে আলাদা সেতুও আছে।
জার্মানির বার্লিন
শুধু বাইসাইকেলের জন্য ওপরের দুই শহরের যেমন খ্যাতি আছে, বার্লিনকে সে বিচারে আলাদা করে উল্লেখ করা হয় না। তবে সাইক্লিস্টদের জন্য শহরটা চমৎকার। ঐতিহ্যবাহী শহরটি ঘুরে দেখার জন্য ৫০০ মাইলের বেশি বাইক লেন রয়েছে। তা ছাড়া বার্লিনের সড়কে সাইকেল চালকেরা অগ্রাধিকার পান। সঙ্গে বোনাস-শহরটিতে কোনো খাঁড়া পাহাড় বেয়ে ওঠার ঝামেলা নেই।
আরও পড়ুন: মহাকাশে ঢেকুর তোলা যায় না কেন?
কানাডার মন্ট্রিয়ল
কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরে দালানকোঠা ফরাসি ধাঁচের। ভাষাও তাই। অবস্থান উত্তর আমেরিকায় হলেও রয়েছে ইউরোপীয় ভাব। সে কারণেই কি-না কে জানে, শহরজুড়ে এক হাজার মাইলের বেশি বাইক লেন আর হাজার পাঁচেক সাইকেল ভাড়া পাওয়ার দোকান রয়েছে। শহরটাও সমতল। চড়াই-উতরাই নেই। সাইকেল চালিয়েও আরাম। তা ছাড়া লাশিন ক্যানাল নামের খালের পাশ ঘেঁষে সাইকেল চালিয়ে গেলে চমৎকার দৃশ্যের দেখা মেলা।
জাপানের টোকিও
পশ্চিমা দেশে সাইকেলের যেমন জৌলুশ, এশিয়ার দেশগুলোতে তেমন নয়। তবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মহানগর টোকিওর কথা আলাদা। শহরটি ঠাঁই করে নিয়েছে সেরাদের তালিকায়। শহরজুড়ে অনেক বাইক লেন রয়েছে। আবার ফুটপাথ দুভাগ করে একাংশকে বাইক লেন ঘোষণা করার উদাহরণ মিলবে ভূরি ভূরি। শহরটা পরিচ্ছন্ন, পরতে পরতে শৃঙ্খলার ছাপ। সাইক্লিস্ট তো বটেই যেকোনো দর্শনার্থীদের জন্যই ভ্রমণের চমৎকার জায়গা।
আরও পড়ুন: উড়োজাহাজের সবচেয়ে নিরাপদ আসন যেখানে
তালিকাটি দশটি শহরের হলে আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেস, স্লোভেনিয়ার লিউব্লিয়ানা, যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিসকো, ফ্রান্সের প্যারিস এবং ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর নাম অবশ্যম্ভাবী হিসেবে চলে আসত।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডটকম