মানুষ তাঁদের আইফোনের খালি বাক্স ফেলে দেন না কেন

 মানুষ তাঁদের আইফোনের খালি বাক্স ফেলে দেন না কেন

টুইটারে ছবিটি পোস্ট করে আলিশা লটমোর নামের এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, এখন কি আমি ‘কুল’?ছবি: টুইটার থেকে

কেউ কয়েন সংগ্রহ করেন, কেউ ডাকটিকিট। কেউ কেউ তো জনপ্রিয় মানুষের এক গোছা চুলের জন্য হাজার হাজার ডলার খরচ করেন। তা না হয় মানা গেল। অনেক মানুষ মুঠোফোনের খালি বাক্স সযত্নে সংগ্রহে রেখে দেন। আর আইফোন হলে তো কথাই নেই। এটা মানুষের সাধারণ অভ্যাস। মোটামুটি সবাই করেন। তবে প্রশ্ন হলো, কেন করেন?

টুইটারে এক ব্যবহারকারী দিনকয়েক আগে লিখেছেন, ‘আমি জানি না কে আমার কথা শুনবে, তবে আইফোনের সঙ্গে যে বাক্স দেওয়া হয়, সেটা ফেলে দিন। আপনার ওটা দরকার নেই, কখনোই হবে না।’

অনেকে নিজের অজান্তেই বাক্সগুলো সংরক্ষণ করে চলেছেন। সে টুইট দেখে যেন সবার টনক নড়ল। টুইটটি ৭৭ হাজারের বেশি রি–টুইট করা হয়। সেখানে অনেকেই জানিয়েছেন, প্রয়োজন ছাড়াই কেন তাঁরা বছরের পর বছর অ্যাপল পণ্যের খালি বাক্স সংরক্ষণ করেছেন। সঙ্গে হ্যাশট্যাগ (#TeamKeepTheBox) জুড়ে দিয়ে অনেকে তাঁদের সাদা রঙের বাক্সগুলোর ছবিও পোস্ট করেছেন।

করবিন উইলিয়ামসের সংগ্রহে থাকা ১৪টি আইফোনের বাক্স। ছবি: করবিন উইলিয়ামস
করবিন উইলিয়ামসের সংগ্রহে থাকা ১৪টি আইফোনের বাক্স। ছবি: করবিন উইলিয়ামস

অনেকের কাছে বাক্সগুলো পুরোনো আইফোনের স্মৃতি

কানাডীয় ডিজাইনার জর্ডান স্টিফেনসেন বাক্সগুলো সংরক্ষণের কারণ হিসেবে চমৎকার নকশার উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষায় ‘মাস্টারপিস’। ভাইস সাময়িকীকে জর্ডান বলেন, ‘সত্যি বলতে অ্যাপলের বাক্সগুলো এত ভালো যে ছুড়ে ফেলতে মন সায় দেয় না।’

১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মিন ট্যানের কাছে বাক্সগুলো পণ্যেরই অংশ। তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রতিটি বাক্স খোলার সময় দামি দামি একটা ভাব মনে আসে। বাক্সটাও সেটারই অংশ।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের করবিন উইলিয়ামস ওসব ‘অ্যাসথেটিক’ ব্যাপার-স্যাপারের ধার দিয়ে যাননি। তাঁর কাছে আইফোন ব্যবহারের স্মৃতিটিই মুখ্য। বাক্সটি কেবল তা মনে করিয়ে দেয়। উইলিয়ামসের বয়স এখন ৩০। হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই বাজারে নতুন আইফোন এলে প্রথম দিনেই দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে তা কেনেন তিনি। স্যুভেনির হিসাবে এখন তাঁর সংগ্রহে ১৪টি আইফোনের বাক্স আছে।

অকেজো বাক্সগুলোকে কেজো করার চেষ্টা। ছবি: এমা জ্যাকুলিন চ্যাং হুই
অকেজো বাক্সগুলোকে কেজো করার চেষ্টা। ছবি: এমা জ্যাকুলিন চ্যাং হুই

অকেজো বাক্সগুলোকে কেজো করার চেষ্টাও হয়েছে

আইফোন হারিয়ে গেলে বাক্স থেকে সিরিয়াল নম্বর দেখে তা খোঁজার কথাও বলেছেন অনেকে। আবার অনেকে হেঁটেছেন সৃজনশীল পথে। আপাতদৃষ্টিতে অকেজো বাক্সগুলো থেকে কাজে লাগতে পারে এমন কিছু তৈরি করে নিয়েছেন। কেউ খাবার রাখার পাত্র বানিয়েছেন। কেউ বসার ঘরের দেয়াল সাজিয়েছেন। আইফোনের বাক্সকে গেম খেলার জয়স্টিক কনট্রোলার বানিয়েছেন একজন।

মূল কারণ কী?

সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক হানাহ চ্যাং বেশি যুক্তিযুক্ত কারণটি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সঙ্গে মূল বাক্স থাকলে পুনরায় বিক্রি করার সময় আইফোনের দাম তুলনামূলক বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর রূপান্তরের ব্যাপার তো আছেই।

ফিলিপাইনের আতেনিও দে ম্যানিলা ইউনিভার্সিটির মনস্তত্ত্বের প্রভাষক জোনাথান রবার্ট ইলাগান অবশ্য আবেগের দিকটাও তুলে ধরেছেন। অনেকে আইফোন ব্যবহার করা অর্জন বলে মনে করেন, বাক্সগুলো তাঁদের হয়তো সে অর্জনের কথা মনে করিয়ে দেয়।

কানাডার রায়েরসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ম্যাথু ফিল্প আরেকটি দিকের কথা বলেছেন। কেউ যে অ্যাপলের পাঁড় ভক্ত, তা হয়তো অ্যাপল পণ্যের খালি বাক্সগুলো দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন অনেকে।

সূত্র: ভাইস সাময়িকী

    আরও পড়ুন

    মন্তব্য করুন

    Your email address will not be published.