নভোচারীদের ব্যাকপেইন বেশি হয় কেন

 নভোচারীদের ব্যাকপেইন বেশি হয় কেন

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ৪৯তম অভিযানের তিন নভোচারী। (বাঁ থেকে) যুক্তরাষ্ট্রের নাসার শেন কিমব্রো এবং রাশিয়ার রসকসমসের সের্গেই রিঝিকভ ও আন্দ্রেই বরিসেঙ্কো। ২০১৬ সালের ৩১ আগস্টের সংবাদ সম্মেলনের এক ফাঁকে। ছবি: নাসা

নভোচারীরা রকেটে চড়ে পৃথিবী ছাড়েন ঠিকই, তবে ব্যাকপেইন (মেরুদণ্ডে ব্যথা) ছাড়তে পারেন না। গবেষকেরা বলছেন, বেশির ভাগ নভোচারীদের মধ্যে ব্যাকপেইনের সমস্যা দেখা দেয় এবং তাঁদের সে সমস্যা সম্পর্কে যত জানা যাবে, পৃথিবীর রোগীদের ততই উপকার হতে পারে।

নভোচারীদের ব্যাকপেইন হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। মহাকাশ ভ্রমণ মানুষের মেরুদণ্ডে কেমন প্রভাব ফেলে, তা জানতে আগের গবেষণাগুলো আবারও পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির একটি দল। তাঁরা এর পেছনে মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ বলের অভাব, রকেটে চড়ার শারীরিক ধকল এবং খাদ্যাভ্যাসে পুষ্টিগুণের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন।

গবেষণাপত্রটির সহলেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক স্টিভেন কোহেন বলেছেন, মহাকাশচারীদের ব্যাকপেইনের কারণ অনুসন্ধান হয়তো অন্যদের সমস্যা সমাধানে কাজের তথ্য দিতে পারে।

মহাকাশ নিয়ে কৌতূহল থাকলে এখানে ক্লিক করুন

একটি গবেষণায় ৭২২টি মহাকাশ অভিযানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৫২ শতাংশ নভোচারীর মধ্যে ভ্রমণ শুরুর দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ব্যাকপেইন দেখা দেয়। ৮৬ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যথা হালকা হলেও অভিযান ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন করতে বাধা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

সামরিক হেলিকপ্টারের চালক ও ক্রুদের নিয়ে করা আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা ভ্রমণের সময় মাধ্যাকর্ষণ বলের তারতম্যের মুখে পড়েছেন, তাঁদের প্রায় অর্ধেকের মধ্যে মৃদু ব্যাকপেইন পাওয়া গেছে। আর সাধারণ মানুষের চেয়ে পাইলটদের মধ্যে সচরাচর মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথা থাকে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ২০১০ সালে করা এক গবেষণায় পাওয়া যায়, নভোচারীদের মধ্যে ডিস্ক হার্নিয়েশনের আশঙ্কা চার গুণ বেশি থাকে। আবার পৃথিবীতে ফিরে আসার এক বছরের মধ্যে ব্যথা শুরু হওয়ার আশঙ্কাও থাকে বেশি।

গবেষণাপত্রটির মূল লেখক যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের জনস হপকিনস হাসপাতালের চিকিৎসক র‍্যাডোস্টিন পেনশেভ বলেন, মানুষের মেরুদণ্ডে ইংরেজি হরফ এস-আকৃতির বক্রতা থাকায় তা মাধ্যাকর্ষণ বল সহ্য করতে পারে। নমনীয়তা এবং ভার ও আঘাত সহ্য করতে পারার কারণও সেটাই।

র‍্যাডোস্টিন আরও বলেন, মাধ্যাকর্ষণ বল কমে যাওয়ায় এ বক্রতা যদি সোজা হয়ে যায়, তবে নভোচারীদের মধ্যে তা তীব্র ব্যাকপেইনের কারণ হতে পারে। আবার পৃথিবীতে ফিরে আসার পর তাঁদের মেরুদণ্ডের স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে।

ওই গবেষকেরা নভোচারীদের ব্যাকপেইন রোধ, নির্ণয় ও সারানোর উপায় নিয়ে করা পুরোনো গবেষণাগুলোও ঘেঁটে দেখেন। সেখানে সুনির্দিষ্ট ব্যায়াম, বিশেষ স্পেস স্যুটের ব্যবহারসহ বেশ কিছু পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আরও বেশি গবেষণা করলে হয়তো ব্যাকপেইন সারানোর সম্ভাব্য চিকিৎসা সম্পর্কে জানা যাবে।

আইসোমেট্রিক, স্কোয়াট, লাং ও বেঞ্চ প্রেসিং অনুশীলনের মাধ্যমে নভোচারীরা ব্যাকপেইন রোধ করতে পারেন। মহাকাশ কেন্দ্রগুলোতে এই ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি রাখা হয়েছে এরই মধ্যে। ব্যায়ামের পাশাপাশি ম্যাসাজ, ভিটামিন ডি ও ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানোর ব্যবস্থা করা, নিউরোমাসকুলার ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ও নেগেটিভ প্রেশার ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে বলেও জানানো হয়।

    আরও পড়ুন

    মন্তব্য করুন

    Your email address will not be published.