পৃথিবীর কক্ষপথে কতগুলো স্যাটেলাইট ঘুরছে

 পৃথিবীর কক্ষপথে কতগুলো স্যাটেলাইট ঘুরছে

পৃথিবীর কক্ষপথে এমন অনেক স্যাটেলাইট আবর্তিত হচ্ছে। ছবি: নাসা

একটু খোঁজখবর রাখলে দেখবেন ইদানীং প্রায়ই পৃথিবী ছাড়ছে রকেট। হয় মঙ্গলে রোবটযান পাঠানো হচ্ছে, নয়তো আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে যাচ্ছে নভোচারীর দল। এখন তো মহাকাশ-পর্যটন বলেও একটা ব্যাপার চালু হয়েছে। এই সেদিন পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে ঘুরে এলেন চার পর্যটক।

তবে মহাকাশে সবচেয়ে বেশিবার রকেটের উড্ডয়ন হয়েছে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর জন্য। পরিমাণটা বেশি বলেই ‘জট’ বেঁধে যাওয়ার একটা আশঙ্কা বিজ্ঞানীরা অনেক বছর ধরেই করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির মহাকাশবিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি কেন্দ্রের পরিচালক সুপ্রিয় চক্রবর্তী এ নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন দ্য কনভারসেশন ডটকমে। পৃথিবীর কক্ষপথে কতগুলো স্যাটেলাইট আবর্তিত হচ্ছে এবং তার প্রভাব বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তিনি।

সুপ্রিয় চক্রবর্তী লিখেছেন, ১৯৫৭ সালে মানুষের তৈরি প্রথম স্যাটেলাইট, অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পুতনিক উড্ডয়ন থেকে শুরু করে প্রতিবছর কক্ষপথে ক্রমাগত স্যাটেলাইট পাঠিয়ে আসছে মানব সম্প্রদায়। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধজুড়ে বছরে ৬০ থেকে ১০০টি স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। এর পর থেকে পরিমাণটি দ্রুত বাড়তে থাকে।

মহাকাশ নিয়ে কৌতূহল থাকলে এখানে ক্লিক করুন

কেবল ২০২০ সালেই ১১৪ বার রকেট উড্ডয়নের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৩০০টি স্যাটেলাইট পাঠানো হয় মহাশূন্যে। সেবারই প্রথম বছরে হাজার স্যাটেলাইট পাঠানোর মাইলফলক অতিক্রম করা হয়। তবে ২০২১ সালের সঙ্গে পূর্ববর্তী কোনো বছরের তুলনা চলে না। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৪০০ নতুন স্যাটেলাইট পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে কেবল ২০২১ সালেই। এই হার সময়ের সঙ্গে বাড়তেই থাকবে।

স্যাটেলাইট ছোট হয়েছে, পাঠানোর খরচ কমেছে

স্যাটেলাইট পাঠানোর এই বর্ধিত হারের কারণ মূলত দুটি। প্রথমত, মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো এখন অনেক সহজ। যেমন গত ২৯ আগস্টে স্পেসএক্সের একটি রকেটে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট পাঠানো হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে। আগামী ১১ অক্টোবর এই স্যাটেলাইটগুলো কক্ষপথে স্থাপন করা হলে কক্ষপথের স্যাটেলাইট সংখ্যা আবারও বাড়বে।

দ্বিতীয় কারণটি হলো, রকেটগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্যাটেলাইট একসঙ্গে ও সহজে বহন করতে পারে। সেটা কেবল রকেট শক্তিশালী হয়েছে বলে নয়, স্যাটেলাইটও এখন আকারে অনেক ছোট হয়েছে। ২০২০ সালে মহাশূন্যে পাঠানো স্যাটেলাইটগুলোর ৯৪ শতাংশই ছিল স্মলস্যাট। এই স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত ওজনে ৬০০ কেজির কম হয়ে থাকে।

স্মলস্যাটের বেশির ভাগের কাজ মূলত পৃথিবী পর্যবেক্ষণ কিংবা যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবাদান। পৃথিবীর প্রান্তিক অঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্পেসএক্সের স্টারলিংক এবং ওয়ানওয়েব মিলে শুধু ২০২০ সালে প্রায় ১ হাজার স্মলস্যাট পাঠিয়েছে মহাকাশে। দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি আসন্ন বছরগুলোতে ৪০ হাজার স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। তা ছাড়া আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে। আমাজন এবং প্রজেক্ট কাইপার এর দুটি উদাহরণ।

এবার বলুন, জট বাঁধার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা কি অমূলক? এই স্যাটেলাইটগুলো এরই মধ্যে নক্ষত্র দেখার পথে বাধা তৈরি করছে। দৃষ্টিপথে বাঁধার ব্যাপার বাদ দিলেও বেতার তরঙ্গের সঞ্চালনে বাদ সাধার শঙ্কাও তো কম নয়। তা ছাড়া বাতিল স্যাটেলাইটের যে জঞ্জাল জমা হচ্ছে কক্ষপথে, তা-ও কম ভীতিজনক নয়।

যাহোক, যে প্রশ্ন দিয়ে লেখা শুরু করা হয়েছে, সেটার উত্তর দেওয়া যাক। দ্য কনভারসেশন ডটকমের হিসাব অনুযায়ী, ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৯৪১।

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.