মার্ক জাকারবার্গকে নিয়ে যে ১০ তথ্য হয়তো আপনার অজানা

 মার্ক জাকারবার্গকে নিয়ে যে ১০ তথ্য হয়তো আপনার অজানা

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ

মার্ক জাকারবার্গ এমন একজন যিনি মানুষের হাতে ফেসবুক তুলে দিয়ে নিজে বসেন খোলা বুক নিয়ে। মানে বই হাতে। গোটা বিশ্বের মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে তাঁর কারবার। অথচ নিজের বেলায় মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন। কতটুকু ব্যক্তিগত তথ্য জনসম্মুখে বলবেন, তার সীমারেখা যেন তাঁর মুখস্থ।

ার্ক জাকারবার্গ এমন একজন যিনি মানুষের হাতে ফেসবুক তুলে দিয়ে নিজে বসেন খোলা বুক নিয়ে। মানে বই হাতে। গোটা বিশ্বের মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে তাঁর কারবার। অথচ নিজের বেলায় মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন। কতটুকু ব্যক্তিগত তথ্য জনসম্মুখে বলবেন, তার সীমারেখা যেন তাঁর মুখস্থ।

দ্য নিউ ইয়র্কার-এর সঙ্গে সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে মার্ককে অবশ্য একটু আলাদা মনে হয়েছে। তাঁর ব্যক্তি জীবনের নতুন অনেক কিছু জানিয়েছেন তাতে। সে সঙ্গে ওয়েব ঘেঁটে মার্ক জাকারবার্গ সম্পর্কে আমরা এমন ১০টি তথ্য জানানোর চেষ্টা করছি যা হয়তো আগে আপনার জানা ছিল না।

১. শর্ত মেনেই প্রিসিলার সঙ্গে বসবাস শুরু

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে একসঙ্গে থাকার জন্য প্রিসিলা চ্যানকে নিজ বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান মার্ক জাকারবার্গ। প্রিসিলা সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিসকোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় চিকিৎসা বিষয়ে পড়ছিলেন। শর্ত দিলেন, চুক্তিপত্রে সই না করলে মার্কের বাসায় উঠবেন না তিনি। চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তু হলো, তাঁকে নিয়ে সপ্তাহে অন্তত একবার ডেটে যেতে হবে। তাঁর সঙ্গে মাসে অন্তত ১০০ মিনিট একাকী সময় কাটাতে হবে। সে স্থান তাঁদের অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা ফেসবুক অফিস হওয়া চলবে না। বলা বাহুল্য, মার্ক সে শর্ত মেনে নিয়েছিল। ২০১২ সালের ১৯ মে তাঁরা বিয়ে করেন।

২. মার্ক বর্ণান্ধ বলেই ফেসবুকের রং নীল

ফেসবুক জুড়ে যে নীল রঙের আধিক্য, তার একটাই কারণ। মার্ক বর্ণান্ধ। জন্ম থেকেই লাল-সবুজ রং তিনি বুঝতে পারেন না। নীলটাই সবচেয়ে ভালো দেখেন। ফেসবুকও তাই এমন রঙে সেজেছে, মার্ক যা সহজে দেখতে পান। আর তাই শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নীল।

৩. স্কুলে পড়ার সময়ই প্রোগ্রামার

মার্ক জাকারবার্গের বাবা এডওয়ার্ড জাকারবার্গ ছিলেন দন্তচিকিৎসক। স্কুলে পড়ার সময় বাবার চেম্বারে কাজ করতেন মার্ক। বয়স তখন ১২, তৈরি করে বসলেন ‘জাকনেট’। তাৎক্ষণিক বার্তা আদানপ্রদানের সফটওয়্যারটি বানিয়েছিলেন বাড়ি আর বাবার চেম্বারের মধ্যে যোগাযোগের জন্য।

এখানে ক্লিক করে সর্বশেষ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন
সিইও হিসেবে মার্ক জাকারবার্গের বার্ষিক বেতন এক ডলার। ছবি: ফেসবুক

৪. আপনার বেতন জাকারবার্গের চেয়ে বেশি

অত্যন্ত লাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা সাধারণত কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য বছরে এক ডলার বেতন নিয়ে থাকেন। জাকারবার্গও বছরে এক ডলার বেতন নেন। তবে কর ফাঁকি তাঁর উদ্দেশ্য না বলেই শুনেছি। এর বদলে তিনি ব্যবসায়ের পারফরম্যান্সের ওপর বোনাস পান। সঙ্গে শেয়ার দেওয়া হয় তাঁকে। এমনটা করার কারণ হলো, এতে ব্যবসায়ের প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ পায়। জান-প্রাণ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো। কারণ ব্যবসায় ভালো না করলে তিনি বোনাস-ভাতা কম পাবেন। আর বেতন নির্দিষ্ট থাকলে প্রতিষ্ঠান ভালো করলেও যা, খারাপ করলেও তা।

৫. তাঁর সাধাসিধে টি-শার্টের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার

বছরের যেদিনই হোক, জাকারবার্গের পোশাক সেই একই—ধূসর টি-শার্ট, হুডি, এক জোড়া জিনস এবং নাইক স্নিকার। হররোজ এক পোশাকের পেছনে তাঁর একটা যুক্তি আছে। ২০১৪ সালে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে মার্ক বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনটা এমন সহজ করতে চাই যেন যতটা সম্ভব কম সিদ্ধান্ত নিয়ে এই কমিউনিটির সেবা করতে পারি।’ মানে দিনে তাঁকে এত শত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে পোশাকের জন্য আলাদা সময় খরচ করতে চান না। টি-শার্ট দেখতে সাদাসিধে হলেও দামে কিন্তু সস্তা না। বিখ্যাত ইতালীয় নকশাকার ব্রুনেলো কুচিনেলির নকশায় তৈরি একেকটা টি-শার্টের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার।

৬. ফেসবুকে তাঁকে ব্লক করা যায় না

ফেসবুকের কর্ণধারকে চাইলে আনফলো করতে পারেন। তবে ব্লক করতে পারবেন না। তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। ব্লক করার চেষ্টা করলে বার্তা দেখায়, ‘এই প্রোফাইল এখন ব্লক করা যাবে না।’ কারণ? ফেসবুকের এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টজকে বলেছেন, ‘প্রোফাইল বা পেজ ব্লক করার সময় ব্যবহারকারীদের এমন বার্তা দেখতে পাওয়ার কারণ হলো, অল্প সময়ের ব্যবধানে তা অনেক বার ব্লক করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: বয়স্করা হাল আমলের গান পছন্দ করেন না কেন
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে লেগে পড়েন কাজে। ছবি: ফেসবুক

৭. সমালোচনার জবাবে কাজ করেন দীর্ঘ সময়

ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর জাকারবার্গের নাওয়া-খাওয়া প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানের ভাষায় ‘সিটজফ্লাইশ’। জার্মান শব্দটির অর্থ বসে দীর্ঘ সময় কাজ করা। মানে ওই সময়ে জাকারবার্গ এতটাই লম্বা সময় ধরে বসে থেকে কাজ করেছেন যে প্রায়ই তাঁর পেশিতে টান ধরত, কোমরেও সমস্যা হয়েছে। এর আগে প্রথমবার রেসিং সাইকেল চালানোর সময় পড়ে গিয়ে হাত ভেঙেছিলেন। তাঁকে আর বাইরে সাইকেল চালাতে দেখা যায়নি।

৮. নিজেকে নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র পছন্দ হয়নি

মার্ক জাকারবার্গ ও ফেসবুকের সৃষ্টি নিয়ে ২০১০ সালে তৈরি চলচ্চিত্র ‘দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’-এ মার্কের ভূমিকায় অভিনয় করেন জেসি আইজেনবার্গ। চলচ্চিত্রে তাঁকে শীতল চরিত্রের এক মানুষ দেখানো হয়। আর এতেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান মার্ক। ফেসবুক কর্মীরা তাঁর সম্পর্কে কী ভাববে! জাকারবার্গ দ্য নিউ ইয়র্কার-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘প্রথম দেখা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষের কাছে এই চলচ্চিত্রই আমার প্রথম দর্শন।’

৯. বিশেষ কোনো সংবাদপত্র পড়েন না

জাকারবার্গ সচরাচর সংবাদ পড়েন অ্যাপে। দ্য নিউ ইয়র্কারকে বলেছেন, আলাদাভাবে কোনো নির্দিষ্ট সংবাদপত্র তিনি পড়েন না। এর বদলে ‘টেকমিম’ নামে নিউজ অ্যাগ্রিগেটর সেবা ব্যবহার করেন। এতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংবাদগুলো আলাদা করে দেখানো হয়।

আরও পড়ুন: দিনে ১৬ বার সূর্যোদয় দেখেন তাঁরা

১০. নিজের ব্যক্তিগত তথ্যের বেলায় সাবধান

এক ঠিকাদার একবার ঠিক করল, মার্ক জাকারবার্গের পালো আলটোর বাড়ির পাশে উঁচু দালান তৈরি করবে যেখান থেকে তাঁর বাড়ির কিছুটা দেখা যায়। খেপে গেলেন মার্ক। ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার খরচ করে আশপাশের বাড়িঘর কিনে নিলেন। মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে কাজ করলেও, নিজের ব্যক্তিগত তথ্য মানুষের হাতে দিতে নারাজ তিনি। এমনকি নিজের সম্পর্কে বলার সময়ও শব্দচয়ন করেন সাবধানে।

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.