আইফোনকে যে ৫ কারণে লেট লতিফ ডাকা উচিত
আইফোনকে কেউ লেট লতিফ ডাকে কি না, জানি না, তবে ডাকা উচিত। কেন উচিত, তা বলছি। তবে পাঠকদের কেউ কেউ হয়তো এরই মধ্যে অনুমান করতে পেরেছেন।
নতুন চারটি মডেলের আইফোন বাজারে ছাড়ছে অ্যাপল। আইফোন ১২, আইফোন ১২ মিনি, আইফোন ১২ প্রো এবং আইফোন ১২ প্রো ম্যাক্স। চারটি মডেলই ফাইভ-জি সমর্থন করে। এ নিয়ে হম্বিতম্বিও কম করেনি মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। উঠতে-বসতে কথায় কথায় বলছে ‘হাই স্পিড’। তবে তাদের চেয়েও হাই স্পিডে ফাইভ-জি স্মার্টফোনের ঘোষণা দিয়েছে একটি কিংবা দুটি নয়, অন্তত ১৮টি প্রতিষ্ঠান। কে জানে, নাম না জানা অনেক চীনা প্রতিষ্ঠানও হয়তো এই তালিকায় ঠাঁই পাওয়ার যোগ্য। শুধু হিমালয়ের চূড়া পেরোতে পারেনি বলে খবর এসে পৌঁছেনি।
এটাই কিন্তু প্রথম নয়। বাজারে কাটতি বাড়ানোর জন্য বড় গলায় অ্যাপল অনেক সুবিধার কথা বলে বটে, তবে ওয়েব ঘাঁটলেই দেখা যাবে, সে সুবিধাগুলো অনেক আগে থেকেই অ্যান্ড্রয়েড–চালিত স্মার্টফোনে ছিল। ফোন দ্রুত চার্জ হওয়ার সুবিধা ‘ফাস্ট চার্জিং’-এর উল্লেখ করা যেতে পারে এখানে। আইফোন ১২ সিরিজের স্মার্টফোনগুলোতে ২০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি থাকছে। সে চার্জারও কিনতে হবে আলাদা করে। অন্যদিকে মাস কয়েক আগেই ২০ নয়, বরং ১২০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি দেখিয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান ভিভোর ব্র্যান্ড আইকু। আরেক চীনা প্রতিষ্ঠান অপো দিয়েছে ১২৫ ওয়াটের ঘোষণা।
এত দিন আইফোনের নিজস্ব কোনো অনুবাদের অ্যাপ ছিল না। আইওএস ১৪ অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে এই তো সেদিন এমন অ্যাপ যুক্ত হলো আইফোনে। কোনো কিছু লিখে অনুবাদ তো করা যাবেই, পাশাপাশি কথোপকথন চালিয়ে গেলে তাৎক্ষণিক তা অনুবাদ করে শোনানোর সুবিধাও থাকছে এতে। এখন প্রশ্ন হলো, এর আগে কি তবে আইফোনে এমন অনুবাদ করা যেত না? যেত। আইফোনের সিংহভাগ ব্যবহারকারী তখন ব্যবহার করতেন গুগল ট্র্যান্সলেট অ্যাপ।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আইফোন ৭ ও ৭ প্লাসে প্রথম ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট বা পানিরোধী সুবিধা যুক্ত করে অ্যাপল। এক মিটার গভীরে আধঘণ্টা পর্যন্ত ডুবে থাকলেও স্মার্টফোনের কোনো ক্ষতি হবে না বলে নিশ্চয়তা দেওয়া শুরু করে। একই সুবিধা মটোরোলার ‘ডিফাই’ মডেলের স্মার্টফোনেও ছিল। স্মৃতির কোণ থেকে কিছু কি উঁকি দিচ্ছে? অবশ্য ভুলে গেলেও আপনাকে দোষ দেওয়া যায় না। মটোরোলা ডিফাই প্রথম বাজারে আসে ২০১০ সালের অক্টোবরে। সে স্মার্টফোনটির হোমস্ক্রিনে উইজেট যুক্ত করা যেত। মানে হোমস্ক্রিনে কী কী দেখাবে, তা ঠিক করে দেওয়া যেত। আইফোনে সুবিধাটি যুক্ত হলো গত মাসে আসা আইওএস ১৪ হালনাগাদে।
গত বছর অ্যাপল যখন আইফোন ১১ সিরিজের স্মার্টফোনের ঘোষণা দিল, মানুষ মজা কম করেনি। মজা করার কারণ হলো, পেছনে তিন ক্যামেরাযুক্ত আইফোন ১১ প্রো ও ১১ প্রো ম্যাক্স দেখিয়ে বারবার ‘উদ্ভাবন’ আওড়েছে অ্যাপল। ২০১৮ সালের এপ্রিলে বাজারে আসা হুয়াওয়ে পি২০ প্রো স্মার্টফোনের পেছনেও কিন্তু তিন ক্যামেরা ছিল। সে বছরের অক্টোবরে বাজারে আসে এলজি ভি৪০ থিনকিউ, তাতেও ছিল তিন ক্যামেরা। এলজির সে স্মার্টফোনটির ক্যামেরা সেটআপ অনেকটা আইফোনের মতোই ছিল—ওয়াইড একটি, আলট্রা-ওয়াইড একটি আর একটি জুম লেন্স। অন্যান্য সুবিধার কথা যদি বলি, সে সময় রাতে আইফোনের চেয়ে গুগলের পিক্সেল সিরিজের স্মার্টফোনে তুলনামূলক ভালো ছবি তোলা যেত।
প্রশ্নোত্তরভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোরাতে এক ব্যবহারকারী আমার মনের প্রশ্নটি করেছেন। এত এত দক্ষ কর্মী আর শত শত কোটি ডলার পুঁজি নিয়ে অ্যাপল কি তবে সবার চেয়ে এগিয়ে যেতে পারে না? বেশ কিছু উত্তর আছে সেখানে। একজন বলেছেন, অ্যাপল কিন্তু সবার চেয়ে এগিয়েই আছে। নাহলে বাজারমূল্যে সবচেয়ে দামি প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হতে পারত না। আরেকজন বলেছেন, অ্যাপল পণ্য বিক্রি করে, সুবিধা (ফিচার) নয়। পণ্য ব্যবহার করে ক্রেতার সার্বিক ‘অভিজ্ঞতা’ নিয়ে তাদের যত ভাবনা। অন্যভাবে বললে, অ্যাপল জানে মানুষ কী চায়।