ভালো ব্যবস্থাপক হতে চাইলে যে ১০ গুণ থাকা চাই

 ভালো ব্যবস্থাপক হতে চাইলে যে ১০ গুণ থাকা চাই

একজন ভালো ব্যবস্থাপক ভালো শিক্ষকও। ছবি: পেক্সেলস

গুগলের গবেষকদের মনে একবার প্রশ্ন জাগল, একজন ভালো ব্যবস্থাপকের মধ্যে কী কী গুণ থাকা উচিত? ২০০৮ সালের দিকে তাঁরা কাজে লেগে গেলেন। প্রকল্পের নাম দিলেন ‘প্রজেক্ট অক্সিজেন’।

প্রজেক্ট অক্সিজেনের গবেষকেরা প্রথমেই গুগলের সেরা ব্যবস্থাপকদের মধ্যে মিল খুঁজতে শুরু করেন। প্রাপ্ত ফলাফল তাঁদের ব্যবস্থাপক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কাজে লাগাতে শুরু করেন।

ধীরে ধীরে তাঁরা ফল পেতে শুরু করেন। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী নীতিমালা তৈরি করেন তাঁরা। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। সে ব্যবস্থাপকদের অধীনস্থ দলগুলো ভালো কাজ করতে শুরু করল।

প্রজেক্ট অক্সিজেন থেকে পাওয়া ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ভালো ব্যবস্থাপকের ১০ গুণাবলি নির্ধারণ করে গুগল। চলুন এবার আমরা তা-ই দেখে নিই।

১. একজন ভালো শিক্ষক

সেরা ব্যবস্থাপক শুধু নিজেই সেরা কাজটা করেন না। তাঁরা অন্যদের শেখাতে শ্রম ও শক্তি ব্যয় করেন। ভালো ব্যবস্থাপক কাজের সেরা পদ্ধতিটা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করেন যেন তাঁর দল এগিয়ে যায়।

২. কর্মীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেন

মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট বলে একটা কথা আছে। এতে ব্যবস্থাপক নিজেই সবকিছুতে নাক গলান। তবে একজন ভালো ব্যবস্থাপকের উচিত তাঁর দলের এবং সম্ভব হলে গোটা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। মানে নিজের সিদ্ধান্ত না চাপিয়ে কর্মীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গা করে দেওয়া, তাঁদের মতামত শোনা।

কর্মপরিবেশ এমন হওয়া চাই যেন সবাই সহজে নিজের মতামত উপস্থাপন করতে পারে। ছবি: পিক্সাবে

৩. সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যান

লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার অভিযানে কর্মীদের শামিল করুন। এমন কর্মপরিবেশ তৈরি করুন যেন যেকেউ প্রশ্ন করতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে নতুন ধারণা উপস্থাপন করার সুযোগ করে দিন।

৪. লক্ষ্যের পানে ছোটেন

ফলাফল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তার জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন লক্ষ্য অর্জনে নিজের সেরাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করে। শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফলাফলের আশা করলে চলবে না। আপনার দলকে জানান কীভাবে সে লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে।

৫. একাধারে শ্রোতা এবং পরামর্শদাতা

অনেক ব্যবস্থাপকের ব্যর্থতার কারণ কর্মীদের সঙ্গে ঠিকঠাক যোগাযোগে স্থাপনে ব্যর্থ হওয়া। যোগাযোগ সব সময় নিম্নগামী কিংবা একমুখী হওয়া ঠিক না। একজন ভালো শ্রোতা হওয়া জরুরি। আপনার দলের বক্তব্য শুনতে সময় ‘বিনিয়োগ’ করুন।

৬. কর্মীর পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ দেন

কর্মীরা আপনার জন্য কী করতে পারে, তা নয়, বরং আপনি কর্মীদের জন্য কী করতে পারেন, তা ভাবুন। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে আপনি কীভাবে তাঁদের সঙ্গে কাজ করবেন, সেদিকে মনোযোগ দিন।

পেশাগত উন্নয়ন জরুরি। আপনার দলের ভালোর জন্য করণীয় ভেবে দেখুন। কাজের প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা যেন গঠনমূলক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

কাজের পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া গঠনমূলক হতে হবে। কর্মীর ভালো কাজের স্বীকৃতি দিন। ছবি: পিক্সাবে

৭. লক্ষ্য ও কৌশল সুস্পষ্ট

ব্যবস্থাপকের যদি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং কৌশল না থাকে তবে দল এগোবে কীভাবে? এর শুরুটা করতে হবে কাজের ধরন ঠিক করার মধ্য দিয়ে। দলের জন্য নিজেই বনিয়াদ তৈরি এবং গতিপথ নির্ধারণ করুন।

৮. পরামর্শ দেওয়ার মতো কারিগরি জ্ঞান থাকে

কেউ ব্যবস্থাপক হলে তিনি লুপ থেকে বেরিয়ে আসেন না। বরং আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যান। লক্ষ্য অর্জনে দলকে আপনি সাহায্য তো করবেনই। সঙ্গে আপনি যদি পানার কারিগরি দক্ষতার নমুনা দেখান, তবে দলের কর্মীদের শ্রদ্ধা অর্জন করবেন। মানে আপনাকে কারিগরি বিষয়েও পারদর্শী হতে হবে।

৯. প্রতিষ্ঠান জুড়ে সমন্বয় করেন

আপনার দল বঙ্গোপসাগরের কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। প্রতিষ্ঠান জুড়ে কাজের সমন্বয় ও সহযোগিতা করতে হবে। আপনার হয়তো এমন বিশেষ কোনো দক্ষতা আছে যা প্রতিষ্ঠানের অন্য দলের কাজে লাগতে পারে। আবার অন্য দলের বিশেষ দক্ষতা আপনি কাজে লাগাতে পারেন। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা যত ভাগাভাগি করবেন, প্রতিষ্ঠান তত এগিয়ে যাবে।

১০. সেরা সিদ্ধান্ত গ্রহীতা

বিশ্লেষণ বেশ কাজের। কৌশল গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে লক্ষ্য ঠিক করা যায়। তবে পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। গবেষণা ও পরিকল্পনা আপনি অনেক সময় খরচ করতে পারেন তবে দিন শেষে যে কাজগুলো সফলভাবে করা হয়েছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

এই ১০ গুণ থাকলে গুগলে তাঁকে ভালো ব্যবস্থাপক বলা হয়। আপনার কী মনে হয়? কোন গুণটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.