চলচ্চিত্রকে ‘রূপালী পর্দা’ বলে কেন
শতবর্ষী হলে ভিন্ন কথা। না হলে শব্দ দুটি আপনি আজন্ম শুনে আসছেন বলেই ধরে নেয়া যায়। চলচ্চিত্রের উল্লেখে কিংবা পুরো চলচ্চিত্র শিল্প বোঝাতে ‘রূপালী পর্দা’র উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
সাদাকালো যুগের চলচ্চিত্রের পর্দা কিংবা চলচ্চিত্রের চাকচিক্যময় জগৎ বোঝাতে শব্দদুটির প্রচলন হয়েছিল বলে ভাবেন অনেকে। তবে ঘটনা ভিন্ন। মেন্টাল ফ্লস ডটকমে এ নিয়ে একটি লেখা পড়লাম।
সিনেমা হলে হাই-রেজল্যুশনের চলচ্চিত্র দেখানোর আধুনিক অনেক প্রযুক্তি এখন আছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ছিল না। পর্দায় ছবি ভালো করে ফুটিয়ে তোলাই ছিল চ্যালেঞ্জ।
সে সময় উদ্ভাবকেরা দেখলেন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর্দায় একপ্রস্ত ধাতব রঙ লেপে দিলে ছবির কনট্রাস্ট বাড়ে, আবার অস্পষ্টতা কমানো যায়।
এই কৌশলের উদ্ভাবক কে, তা ঠিক পরিষ্কার নয়। তবে কৃতিত্ব দেয়া হয় হ্যারি সি উইলিয়ামসকে। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়োর সার্কাসকর্মী ছিলেন, পরে চলচ্চিত্রের প্রজেকশনিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৯২০ সালের দিকে পর্দায় রূপালী রঙ করতে শুরু করে উইলিয়ামস। চলচ্চিত্রের পর্দা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা ছিল তার। ১৯৪০-এর দশকে ভিনাইলের তৈরি চলচ্চিত্রের পর্দা তৈরি শুরু করেন তিনি।
শুরুতে পর্দার ধাতব বা চকচকে ভাব আনতে মাছের আঁশ ব্যবহার করেন। তার প্রতিষ্ঠান উইলিয়ামস স্ক্রিন কোম্পানি ১৯৫০-এর দশকজুড়ে দারুণ ব্যবসা করে।
অবশ্য উইলিয়ামসের আগে থেকেই রূপালী পর্দার চল ছিল। ১৯০০ সালের দিকে আইল অব ওয়াইট অবজার্ভার পত্রিকায় আসন্ন এক প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, যাতে ‘দ্য লেটেস্ট সিনেমাটোগ্রাফ (লিভিং পিকচার্স অন দ্য সিলভার স্ক্রিন)’ দেখানো হবে। অর্থাৎ পর্দায় ছবিকে জীবন্ত মনে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার থিয়েটারগুলোতে এই পর্দা যুক্ত করা শুরু করলে প্রযুক্তিটি পরিচিতি পেতে শুরু করে।
দ্য প্রভিন্স পত্রিকায় ১৯০৯ সালের জুলাইয়ে লেখা হলো, ‘ফলাফল অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক, কারণ পর্দায় বিষয়বস্তু আগের চেয়ে আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ফুটে ওঠে, আউটলাইন পরিষ্কার ও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।’
সার্বিকভাবে চলচ্চিত্র বোঝাতে অলংকারিক অর্থে এখনো যদিও রূপালী পর্দার উল্লেখ করা হয়, তবে রূপালী পর্দা একেবারে বাতিল হয়ে যায়নি। বিশেষ করে ত্রিমাত্রিক চলচ্চিত্র দেখানোর সময় প্রযুক্তিটি বেশ কাজে দেয়।