বিমানে কোন আসন আপনার জন্য সেরা?
এ প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর নেই। সরাসরি বলার সুযোগ নেই, অমুক সিটে গিয়ে বসে আরাম করে দুটো ঘন্টা জিরিয়ে নিন। কেউ ভাবেন, বিমানে উঠেই ঘুমে তলিয়ে যাবেন। কেউ ভাবেন, সবার আগে বের হয়ে মিটিং ধরবেন। কেউ আবার মিনিট দশেক পর পর উঠে হাত-পা ঝাড়া না দিলে থাকতে পারেন না। বিমানে আপনার অগ্রাধিকার কী, তার ওপর নির্ভর করে আসন ঠিক করা উচিত।
ভালো ঘুম চাইলে
বিমানে ঘুম যদি মুখ্য হয়, জানালার পাশে আসন নিন। মানে উইন্ডো সিট। এর দুটো কারণ। প্রথমত, ইঞ্চির ১০ ভাগের এক ভাগ হলেও জায়গা বেশি পাবেন। মানে আসন আর বিমানের দেয়ালের মধ্যে। চাইলে দেয়ালে মাথা এলিয়ে দিতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, আশপাশে যে পাড়া-প্রতিবেশী আছে, মানে আপনার সহযাত্রীরা বিরক্ত কম করবেন। আপনি যদি উইন্ডো সিটে বসেন, তবে কেউ টয়লেটে (বিমানে অবশ্য ‘ল্যাভাটরি’ বলে) যেতে চাইলে আপনাকে ডেকে তোলার প্রয়োজন পড়বে না।
বিমানের কোন পাশে বসবেন
বাসায় কেউ ডান কাঁধে, আবার কেউ বাঁ কাঁধে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত। বিমানেও সে পাশের উইন্ডো সিট বেঁছে নিন।
এভিয়েশন নিয়ে আরও জানতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে
দ্রুত বেরোতে চাইলে
বিমান থেকে একসঙ্গে বহু যাত্রী নামে। তাঁদের আবার কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের ব্যাপার আছে। আস্তে-ধীরে নামা ভালো। তবে সে ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি তৈরি হতে পারে। এদিকে আপনাকে বিমান থেকে নেমেই বেরিয়ে মিটিং ধরতে হবে। বা দৌড়ে আজ রাতের শেষ ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরতে চান। সে ক্ষেত্রে বিমান থেকে প্রথমে নামলে কখনো কখনো ৩০ মিনিট পর্যন্ত দ্রুত বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
কিছু কিছু বিমানে পেছনের দিকেও অতিরিক্ত দরজা থাকে। তবে সেটার ওপর নির্ভর করা উচিত হবে না। কারণ যাত্রী কম থাকলে কিংবা একাধিক সিঁড়ির ব্যবস্থা না থাকলে পেছনের দরজা না-ও খুলতে পারে। সুতরাং, যতটা সম্ভব সামনের দিকে আইল সিট নিন। মানে বিমানে আসনের মধ্যে যে সরু পথ থাকে, সেটার সঙ্গে কোনো আসনে বসুন। তবে আপনার সঙ্গে থাকা বাক্সপেটরার ব্যাপারের সাবধানী হোন।
শরীরের জন্য সহায়ক
আপনি যদি না ঘুমান, তবে আইল সিটের আরেকটা সুবিধা হলো, কাউকে বিরক্ত না করে টয়লেটে যেতে পারবেন। উঠে হাত-পা ঝাড়া দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতেও বাঁধা থাকবে না।
দেখে নিন বিমানে ঘুমানোর ১৪টি কৌশল
অতিরিক্ত জায়গা (লেগরুম) চাইলে
ইকোনমি শ্রেণিতেও কিছু কিছু আসনে লেগরুম বেশি পাওয়া যায়। কোনো বিভাজকের পেছনের বাল্কহেড সিট এবং কখনো কখনো জরুরি বেরোনোর পথের সামনের আসনে লেগরুম বেশি থাকে।
অবশ্য খারাপ দিকটাও আছে। যেমন এই আসনগুলোতে আপনি সঙ্গে কিছু রাখতে পারবেন না। সবকিছু মাথার ওপরের নির্ধারিত স্থানে রাখতে হবে। অনেক সময় এই আসনগুলো হেলানোর সুজগো থাকে না। সিটগুরু নামের ওয়েবসাইট থেকে আপনার বিমানের আসন বিন্যাস দেখে নিতে পারেন।
ইন্দ্রিয়ের আরাম চাইলে
টয়লেটের সঙ্গে লাগোয়া আসনের একটা সমস্যা হলো, পদধ্বনি বেশি কানে যাবে। আর দুর্গন্ধ ছড়ানোর সম্ভাবনাও বেশি থাকে। বিমানে পাখার নিচে এবং লেজের দিকে ইঞ্জিন থাকে। সামান্যতম শব্দে যাঁদের ঘুম ভেঙে যায়, তাঁরা মাথায় রাখতে পারেন—ইঞ্জিনের কাছে গুঞ্জন বেশি কানে যাবে। দরজার আশপাশের আসনগুলো যে তুলনামূলক বেশি শীতল হতে পারে, তা আগেভাগে জেনে রাখা ভালো।
একাকী সময় কাটাতে চাইলে
বিমান ভ্রমণে পাশে একটা ফাঁকা আসন সবাই চান। আর পুরো সারি ফাঁকা পেলে তো কথাই নেই। বিমানে আসন সাধারণত সামনের দিক থেকে পূরণ হয়ে পেছনের দিকে আসে। তাই সম্ভাব্য প্রাইভেসির আশায় পেছনের দিকে আসন ঠিক করতে পারেন। আর পেছনের দিকে মাঝের কলামের আসনগুলো ফাঁকা থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুন: নভোচারীদের ব্যাকপেইন বেশি হয় কেন
আসন বদলাতে চাইলে
বিমান উড্ডয়নের আগে আসন পরিবর্তন করতে মানা করা হয়। যদিও অনেকে করেন। বিমানে যাত্রীর আসন গ্রহণ শেষ হলে কেবিন ক্রুরা সাধারণত ঘোষণা দেন। তখন আশপাশে তাকিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন কোন আসন ফাঁকা আছে।
যারা একটু নার্ভাস
বিমানের দুই পাখার মাঝের আসনগুলো এ ক্ষেত্রে ভালো বলা যেতে পারে। ঝাঁকি কম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সবচেয়ে নিরাপদ আসন
এর কোনো সদুত্তর নেই। তবে জনপ্রিয় বিশ্বাস হলো, পেছনের দিকে মাঝের আসনগুলোতে বসলে দুর্ঘটনায় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি। আর বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাবনার কথা যদি বলতেই হয়, বলে রাখি, আপনাকে অত্যন্ত দুর্ভাগা হতে হবে। কারণ, মানুষের আজীবনের সব দুর্ঘটনা বিবেচনায় রেখে, বিমানে মৃত্যুর সম্ভাবনা ০.০১২৫ শতাংশ।
তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুন: আয়ারল্যান্ডে সাপ নেই কেন